New

শ্বেতপত্র

বিমল মালীর ঢোল | সুবীর সরকার

এক বৃষ্টির দিনে আপনার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল।
আপনি হেঁটে যাচ্ছিলেন মাটিয়াবাগের দিকে
কাঁধে ঢোল,দুচোখে লাল টিয়ার ছায়া।
রাজকুমারীর গানের সুর আপনাকে উদদীন এক
                  দুপুরের ভেতর টেনে নিয়ে যাচ্ছিল
এরপর কত কত দৃশ্যের মধ্যে আপনি রূপকথা রচনা
                                                      করে গেলেন!
আপনার কাঠিঢোল জাদুকরের রুমালের মত
                                                কিংবদন্তি হয়ে গেল
আপনি থাকবেন।
গদাধরের পারে পারে দেখবো গান আর ঢোল নিয়ে 
                      হেঁটে যাচ্ছেন আমাদের বিমল মালী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. আব্দুল হাই হরিকেশশনিবার, ২৪ মে, ২০২৫

    সুবীর সরকারের এই কবিতাটি এক ধরনের স্মৃতিমেদুর, কাব্যময় শ্রদ্ধাঞ্জলি—যা এক শিল্পীসত্তাকে কেন্দ্র করে নির্মিত। এটি শুধু কোনো ব্যক্তি বা চরিত্রের প্রতি নয়, বরং এক ধরণের লোকসাংস্কৃতিক চেতনার প্রতীকী চিত্রও তুলে ধরে। নিচে কবিতাটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো:

    প্রথম পরিচয়ের মাহাত্ম্য:
    > “এক বৃষ্টির দিনে আপনার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল।...”

    এই পংক্তিতে রয়েছে এক আবেগঘন মুহূর্তের স্মৃতি। ‘বৃষ্টির দিন’ প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় এক অন্তর্মুখী, বিষণ্ন, আবেগময় পরিবেশের, যা পাঠককে এক নির্দিষ্ট আবহে নিয়ে যায়। এখানেই প্রথম দেখা, যার মধ্যে নিহিত থাকে কাব্যিক গূঢ়তা ও ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি।

    চরিত্রচিত্রণ ও প্রতীক:
    > “কাঁধে ঢোল, দুচোখে লাল টিয়ার ছায়া।”

    এই পংক্তিতে যে চরিত্রটিকে উপস্থাপন করা হয়েছে, সে যেন এক যাযাবর শিল্পী—গান-বাজনার সাথে যিনি নিবিড়ভাবে যুক্ত। “ঢোল” এখানে কেবল বাদ্যযন্ত্র নয়, বরং শিল্প, আত্মপরিচয় ও সংস্কৃতির প্রতীক। আর “লাল টিয়ারের ছায়া”—এটি দৃষ্টিনন্দন অথচ রহস্যময়, যেন চরিত্রটির চোখেও কিছু অদেখা গল্প আছে।

    রূপকথার রূপকার:
    > “রূপকথা রচনা করে গেলেন!”

    এই বাক্যে কবি এক বাস্তব চরিত্রকে কল্পলোকের রূপে স্থাপন করছেন। কবিতাটি যেন ব্যক্তিগত স্মৃতি থেকে বেরিয়ে এক সর্বজনীন কাব্য-চেতনায় পরিণত হয়। এখানে বাস্তবতা ও অলৌকিকতার এক অনন্য সংমিশ্রণ দেখা যায়।

    কিংবদন্তি ও স্মরণীয় হয়ে ওঠা:
    > “আপনার কাঠিঢোল জাদুকরের রুমালের মত কিংবদন্তি হয়ে গেল”

    কাঠিঢোল বা ঢোল এখানে শুধু একটি বাদ্যযন্ত্র নয়, এটি যেন এক ‘জাদুকরী উপকরণ’। কবি বলছেন, সেই ঢোল এখন কিংবদন্তি—অর্থাৎ সে সময়, সে মানুষ, সে সঙ্গীত—সবই আজ স্মৃতির অলিন্দে, লোককথার মত অমর।

    শেষ পংক্তিতে লোকসংস্কৃতির মহিমা:
    > “গদাধরের পারে পারে দেখবো গান আর ঢোল নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আমাদের বিমল মালী”

    এখানে ‘গদাধরের পার’ মানে নদীর ধারে, বাংলার এক গ্রামীণ চিত্র। আর ‘বিমল মালী’—এক প্রতীকী নাম, যিনি লোকগান ও ঢোল নিয়ে হাঁটছেন—অর্থাৎ এক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বহন করছেন। তিনি আর একজন নন, সেই একই চরিত্র, যিনি প্রথম দেখা দিয়েছিলেন।

    সমগ্র অর্থবোধ:
    এই কবিতা স্মৃতিচারণা, শ্রদ্ধা, এবং লোকজ সংস্কৃতির প্রতি গভীর আবেগের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত। এটি এমন একজন মানুষের কথা বলে যিনি হয়ত আমাদের চারপাশেই ছিলেন, গান বাজাতেন, কিন্তু তার অস্তিত্ব আজ কিংবদন্তি হয়ে গেছে। কবির দৃষ্টিতে তিনি রূপকথার চরিত্র, লোকস্মৃতির নায়ক।

    উপসংহার:
    সুবীর সরকারের এই কবিতাটি যেন এক লোকশিল্পীর কাব্যিক জীবনী। এর পেছনে রয়েছে বাংলার লোকসংস্কৃতির সুর, স্মৃতি ও জাদু। পাঠককে এটি এক অনুভবের জগতে টেনে নিয়ে যায়, যেখানে ঢোলের সুর, বৃষ্টির দিন আর একজন বিমল মালীর ছায়া অমলিন হয়ে থাকে।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আব্দুল হাই হরিকেশ
      কৃতজ্ঞতা জানবেন। আপনি নিশ্চয় ভালো ও সুস্থ আছেন সে কামনাই করি সব সময়।
      আপনি যে নিয়মিত অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা শ্বেতপত্র পাঠ করেন এবং লেখার বিষয়বস্তু ধরে ধরে বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা করেন সেই জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও সম্মান জানাই। আপনার ধারাবাহিক শ্বেতপত্র পাঠ ও লেখা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ মন্তব্য আমাদের প্রাণিত করে চলেছে শ্বেতপত্র প্রকাশে। আপনার/ আপনাদের মতো পাঠক শ্বেতপত্রের আছে বলেই আমাদের শিল্প-সাহিত্যের চর্চা অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারছি। আপনি শ্বেতপত্রের সাথেই থাকুন আরো বেশি বেশি লেখা সম্পর্কে মন্তব্য করে আমাদের শিল্পের যাত্রাকে সচল ও বেগবান করবেন এ প্রত্যাশা।

      মুছুন

অমার্জিত মন্তব্য করে কোনো মন্তব্যকারী আইনী জটিলতায় পড়লে তার দায় সম্পাদকের না৷