আর মাত্র ক'দিন পরেই ইদ। সলিমের ইচ্ছা যত কষ্টই হোক এবারের ইদে বউকে একটা নতুন শাড়ি কিনে দিবে সে। গত ইদে একমাত্র মেয়ে মুক্তিকে নতুন জামা-কাপড় দিয়ে সাজিয়েছিল সলিম, কিন্তু বউকে কিছুই দেয়া হয়নি তার। তাই এবারের ইদে বউকে নতুন শাড়ি কিনে দেবার ইচ্ছা সলিমের মনে নিয়ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সলিম হিসাব করে ইদের বাকী দিনগুলি সংসার চালানো, বউয়ের শাড়ি ও ইদের দিন একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করতে কমপক্ষে তিন-চার হাজার টাকার প্রয়োজন। সলিম ভাবে কী করে এত টাকা যোগাড় করা যায়। গত কয়েক দিন বাজার খরচ কমিয়ে প্রায় পাঁচশত টাকা জমিয়েছে সে। বাকী টাকা আর কোনমতেই জোগাড় হচ্ছে না, জমানোও যাচ্ছে না।
সলিমের চোখে ঘুম নেই। সারা রাত সে কী যেন বিরবির করে হিসাব করে। বউ কাজলি সলিমের বিরবির করে হিসাব করার বিষয়টি লক্ষ্য করে। প্রশ্ন করে, কী গো! সারা রাত অতসব কী বিরবির করো?
সলিম জবাব দেয়, কী আর বিরবির করি, আর ক'দিন পরেই ইদ। হাতে তো তেমন টাকা-পয়সা নাই, কাজ-কামাইও মাঝে মধ্যে ফাঁক যায়। কাজলি বুঝতে পারে সলিমের বিরবির করার বিষয়। বিছানার দিক ফিরিয়ে কাজলি-সলিমকে কাছে টানে। মাথায় হাত বুলাতে-বুলাতে বলে, জমানো পাঁচশত টাকা দিয়ে এবার ইদে যেন তার (স্বামীর) জন্য শার্ট ও লুঙ্গী কিনে।
সলিম কাজলির কথা শুনে হাসে! কিছুই বলে না। কাজলি আবার জানায়, সকালে রাজুভাবি বাড়িতে আইছিল, মুক্তিকে স্যালোয়ার-কামিজ দিবে বলে নিয়া গ্যাছে। রাজু ভাবি বরাবরের মতো এমনি করে। রাজু ভাবির ভয়! খুশির দিনে গ্রামের কোন শিশু আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলে তাতে নাকি গ্রামের মানুষের অমঙ্গল হয়। এই অন্তর্নিহিত ভয় ও গ্রামের দরিদ্র সলিমের পরিবারের প্রতি ভালোবাসায় রাজুভাবি মুক্তিকে নিয়ে যান প্রতি ইদে। মুক্তিকে নতুন জামা বানিয়ে দিবে শুনে সলিম হাসে। সলিম জানে, ভাবি আসবেন, মুক্তিকে নিয়ে যাবেন, নতুন জামাও বানিয়েও দিবেন। কিন্তু, স্বামীর কাছে স্ত্রীর যে প্রত্যাশা যে আশা তা কেমন করে পূরণ করবে সলিম। অনেকক্ষণ চুপচাপ দেখে ফের প্রশ্ন করে কাজলি, কী গো ঘুমিয়ে পড়েছেন নাকি। সলিম উত্তর দেয় হুঁ! ফের হুঁ! ঘরের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো দেখা যায়।
প্রতিদিনের মতো আজও একটা ছোট্ট চটের ব্যাগ ও হাতে দা নিয়ে শহরের দিকে কাজের সন্ধানে হাঁটা শুরু করে সলিম। হাঁটতে হাঁটতে ফের হিসাব করে ইদের বাকী দিনগুলি কাজের ফাঁক না গেলে বউকে একটা শাড়ি কিনে দেয়া যাবে। ইদের দিন ভালো খাওয়া যাবে। নদী পার হয়ে একত্রে কিছু লোকের ভিড় দেখতে পায় সলিম। এগিয়ে আসে কাছাকাছি। কাছে আসতেই সলিমের এক বন্ধু তমিজ মিয়া সলিমকে দেখা মাত্র ডাক দেয় সলিম ও সলিম-এই প্যাকে আয়। সলিম এগিয়ে আসে। চেয়ারে বসে থাকা এক ভদ্রলোককে দেখিয়ে দিয়ে তমিজ বলে, স্যার; উয়ার নাম সলিম। উয়ার গ্রাম থাকি প্রতিদিন পঞ্চাশ-ষাট জন শহরোত কাম কইরবার আইসে, এই প্যাকে হামরা আছি বিশ-পঁচিশ জন। কাইল থাকি কাম শুরু করি দেই, বাকী মানুষ দু-এক দিনের মধ্যে যোগাড় হয়া যাইবে। রাজি হয় ভদ্রলোক। সলিমকে বলে কী হে সলিম মিয়া আমার অনেক কাজের লোক দরকার, তোমার গ্রাম থেকে কিছু লোকজনকে যোগাড় করে নিয়ে আসতে পারবা। প্রায় এক বছর কাজ হবে, প্রতিদিন চারশ' করে টাকা পাবে। শুনে সলিম থ মেরে যায়! জবাব দেয়, হ পারুম, কিন্তু এত লোক দিয়া কী হইবে, সলিম প্রশ্ন করার আগেই বন্ধু তমিজ মিয়া জানায়, সলিম তোর গ্রাম থাকি রহিম মিয়া, আইজার ভাইদের নিয়া পঞ্চাশ-ষাট জন যা পারিস কাইল সকালে নিয়া আসিস। সলিম বন্ধু তমিজকে প্রশ্ন করে অত মানুষ দিয়া কী হইবে। অত মানুষ কী কাম কইরবে? তমিজ জানায়, হামার সোনাহাটোত বলে ইপিজেট কি জানি, কি হইবে। অটায় বলে বড় বড় আন্তা, বড় বড় বিল্ডিং বানাইবে। ঐ ভদ্রলোক সরকার থাকি কাম নিছে, মেলা কামের মাইনষ্যের দরকার। কাইল বিয়ান থাকি ঘাটের মধ্যে ট্রাকে-ট্রাকে ইট, পাথর আইসপে। হামরা খালি উবামো, তুই না করিস ন্যা। সলিম রাজি হয়। ভদ্রলোক সলিমের নাম লিষ্ট করে উপস্থিত সকলকে একশ' করে টাকা বকসিস দিয়ে সকলকে সকাল-সকাল কাজে যোগ দিতে বলে চলে যায়। উপস্থিত সকলে আগামীকাল কে-কীভাবে কাজ শুরু করবে বুদ্ধি পরামর্শ করে যে যার মতো কাজে চলে যায়।
একশত টাকা পকেটে পুরে মনের আনন্দে সলিমও ফের হাঁটা শুরু করে। সলিম শহরে সারাদিন কাজ করে আর ভাবে আগামীকাল থেকে চারশত করে টাকা পাওয়া গেলে ইদ পর্যন্ত তিন-চার হাজার টাকা জমাতে পারবে সে। সলিম মনে-মনে আশ্বস্ত হয়। নিজের প্রতি বিশ্বাস জন্মে এবার ইদে বউকে একটা নতুন শাড়ি কিনে দিতে পারবে সে। সেই সাথে মেয়ে মুক্তিকেও কিছু কিনে দেয়ার চিন্তা করে, স্বপ্ন দেখে, এভাবে এক বছর কাজে ফাঁক না গেলে একটা ধানের জমিও কিনবে। সলিম চায়না ভিজিডি কার্ডের চাল তুলতে গিয়ে কাজলি লাইনে দাঁড়াক, মানুষের গলা ধাক্কা খাক্। সলিম মনে মনে দোয়া পড়ে, 'হে আল্লাহ অমন ভদ্রলোকদের তুমি তৌফিক দিও ওমরা যেন প্রতি বছর একটা করি ইপিজেট বানায়।'
দোয়া পড়তে পড়তে দু'মাইলের বালুচর, নদীপথ পেরিয়ে বাজার খরচ করে বাড়ি ফেরে সলিম। বাড়িতে ঢুকেই বউকে ডাক দেয়। কই গো মুক্তির মা ভাত দে। স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে কাজলি বুঝতে পারে বোধ হয় আজকের উপোস খুব তাড়া দিছে। ভাত দেয়া কাজলি। ভাতের গ্রাস মুখে তুলতেই অভক্তিতে উকি মারতে চায় সলিম। খুল্টি কালাইয়ের ডাইল আর আলুভর্তা কত খায়, কিন্তু না খেয়ে উপায় কী, কামলা দেয়া টাকায় তো আর গোস্ত কেনা যায় না। যা জোটে সেটাই খাওয়া ভালো।
সলিম তার অভক্তির কথা বউকে বুঝতে দেয় না বরং বউয়ের আলু ভর্তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্রশ্ন করে কী গো মুক্তির মা শুটকী মাছের গুড়া দিয়া এত সুন্দর আলু ভর্তা বানাইতে শিখলি কার কাছ থাকি। কাজলি মুচকী হাসে। উত্তর দেয়, ক্যান বুঝেন না আপনের ওই বাজার খরচের ব্যাগ দেখি। সলিম এবার একটু থেমে যায়। বউকে ফের প্রশ্ন করে, ডাইল আলুভর্তা খাইতে-খাইতে বুঝি বিরক্ত ধরছে। কাজলি রেগে উঠে জবাব দেয়, আমার তো ধরছে, আপনের ধরে নাই? পকেটে তো দশ-বিশ ট্যাকা ছিলো হামার জন্যে না হোক, মাইয়্যোটার জন্যে একটা ডিম আনতে পারতেন। সলিম বলে, আইনমুরে আইনমু, কাইল থাকি তোর জন্যেও আইনমু। সলিমের অমন কথা শুনে বউ কাজলি এবার যেন আকাশ থেকে পড়ে। স্বামীকে জিজ্ঞেস করে কোন চেরাগ পাইলেন নাকি। গামছায় হাত মুছতে মুছতে সলিম জানায়, মনে কর অমনে। কাজলি জানার আগ্রহ নিয়ে সলিমের আরো কাছাকাছি হয়। জানতে চায়, স্বামীকে আজ অত হাসিখুশি লাগছে কেন। সলিম কাজলিকে জানায় সেই খুশির কথা, আশার কথা। আগামীকাল থেকে একনাগারে বছরখানেক কাজ হবে, তাদের আর দুঃখ-কষ্ট থাকবে না। বউ কাজলি এবার একটু নীরব হয়। হিসাব করে কাজের ফাঁক যদি না যায় তা হইলে তো কোন সমিস্যা নাই।
জমানো পাঁচশত আর প্রতিদিন একশ করে টাকা কম খরচ করলে ইদের বাকি দিনগুলিতে কিছু টাকা জমবে, সলিমকে হিসাব শোনায় কাজলি। কাজলি এবার একটু জোর দিয়ে ইদে সলিমের জন্য একটা শার্ট ও লুঙ্গি কিনতে বলে। কাজলির হিসাব শুনে সলিম হাসে। আকাম্মাৎ কাজলিকে জড়িয়ে ধরে বলে, কী গো স্বামীর জন্যে খুব দরদ-নিজের জন্যে কিছু কও! কাজলি কোন উত্তর দেয় না। বলে উহ! উহ! ছাড়েন মুক্তি আইস্যা পড়বো!
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের জ্যোৎস্নায় সারা গ্রাম ঝলমল করছে। সলিম ঘর থেকে বেড়িয়ে প্রতিদিনের মতো আজও উঠানের আমগাছের নীচে পাতানো টঙে শুয়ে পড়ে। গুয়া, পান, বালিশ ও একটি কাঁথা নিয়ে কাজলিও আসে পিছে পিছে। মাদুর বিছানো টঙে কাথা মোড়া দিয়ে গুয়া, পান চিবাতে থাকে সলিম। স্বামীর পাশে শুয়ে কাজলিও পান খায়, মাঝেমধ্যে গুনগুন করে গানও গায়। সলিম কান পেতে দেয় বুঝতে চায় সেই গানের ভাষা, বুঝতে পারে না। সুর কাছে টানে, দুজনে কাছাকাছি হয় আরো কাছে, খুব কাছে। সলিম প্রশ্ন করে কী গো এবারের ইদে কেমন শাড়ি নিবি নাল না নীল। কাজলি জবাব দেয় চাঁদ উঠে নাই। সলিম বলে ধ্যাত! হিসাবের চাঁদ উঠবোই। বল না কেমন নিবি? কাজলি এবার চোখ খুলে স্বামীর চোখের দিকে তাকায়। মুচকি হেসে জানতে চায়- সত্যিই দিবেন, দিয়েন আপনের চোখের মতোন।
10 মন্তব্যসমূহ
তুমি আমাকে শাড়ি কিনে দিও করির সোনা
উত্তরমুছুনগল্পকারকে আপনার আকাঙ্ক্ষা পৌছে দেয়া হবে
মুছুনওগো সম্পাদক তুমি আমাকে ঈদের শারি কিনে দেওনি দেখে আই হেটিউ
উত্তরমুছুনশাড়ী তো মার্কেটে, গিয়ে নিয়ে আসিয়েন
মুছুন
উত্তরমুছুনকাজলি চরিত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হঠাৎ আসে, যেমন— হঠাৎ তার এত শাড়ির আগ্রহ, বা হঠাৎ এত হিসাবের যোগ দেয়ার ক্ষমতা।
গল্পে রাজু ভাবির চরিত্র এসেছে, কিন্তু সে কেবল একটি উদ্দেশ্য পূরণ করেই হারিয়ে গেছে।
এই ত্রুটিগুলো সংশোধন করুন৷
সংলাপের ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন – প্রমিত বা আঞ্চলিক ভাষা যেটি বেছে নেবেন, সেটি গল্পজুড়ে বজায় রাখুন।
গল্প শেষ করার অংশটি আরও সংযত ও শৈল্পিক হতে পারত – শেষ সংলাপে “আপনের চোখের মতোন” কথাটি সুন্দর লাগছে হয়ত শুনতে কিন্তু এটি সস্তা খেলো কথা হয়েছে যা পাঠককে বিরক্ত করে।
প্রধান ত্রুটি:
ভাষার দ্বৈততা
প্যারাগ্রাফহীন গদ্য
দুর্বল সংলাপের ঘনঘটা ও পুনরাবৃত্তি
Dr. Rezaul karim
মুছুনজনাব
পাঠ মূল্যায়ন করার জন্য কৃতজ্ঞতা
লিস্টের অনেককেই দেখছি পোস্ট দিচ্ছেন, "বিয়ে করার আগে জেনে নিবেন বউ গরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করতে পারে কিনা।"
উত্তরমুছুনযারা গরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করা নিয়ে খুব বেশি প্যাড়ায় আছেন, পীড়ায় আছেন, তারা আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদের বাসার সুজনের মা ২০০ টাকার বিনিময়ে ভুঁড়ি পরিষ্কার করে দিচ্ছে। আপনি আমাকে ২৫০ টাকা দেবেন। সুজনের মার ২০০ আর সার্ভিস চার্জ ৫০। আপনার ভুঁড়ি পরিষ্কার করার দায়িত্ব সুজনের মায়ের।
এরপরেও যদি আপনি মনে করেন, আপনি আপনার স্ত্রীকে দিয়েই ভুঁড়ি পরিষ্কার করাবেন, তাহলে মনে রাখবেন, ভুঁড়ি পরিষ্কারে pro হওয়ার পরেও সুজনের মাকে তার হাসবেন্ড cheat করে জুলেখা নামের অন্য মহিলাকে নিয়ে ভেগে গেসে। সুজনের মা এখন সিঙ্গেল। আপনি চাইলে আপনার সাথে সুজনের মায়ের বিয়ের ঘটকালি আমি করে দিতে পারি। আর ঘটকালিটা আমি free তে করে দিব। কোনো টাকা লাগবেনা। ❤️
ছোটভাই সুন্দর লিখসো
উত্তরমুছুনতোমার ভাবী পড়ে োোমাকে নিয়ে খুব হাসলো ,
কি বেপার কবীর ? তোমরা সবাই কবিতা লিখসো কিন্তু আমার নাতিটাকে খেলায় নেও নাই কেন ? আমার নাতি হিরো কবি মোখলেছুর রহমান চৌধুরীর কবিতা বাদ দিয়ে তোমরা ঈদ সংখ্যা পকাত করে প্রকাশ করো দিছো কেন?
উত্তরমুছুনগল্প পরে হাসতে হাসতে পেদে ফেলসি
উত্তরমুছুনঅমার্জিত মন্তব্য করে কোনো মন্তব্যকারী আইনী জটিলতায় পড়লে তার দায় সম্পাদকের না৷