New

শ্বেতপত্র

মঙ্গলশোভাযাত্রা বিতর্ক / সুদেব চক্রবর্তী



🇧🇩
বাঙালি মুসলিম হলো কবে? এই তো সেদিন। ধর্মমত হিসেবে বাংলার আদি ধর্ম ছিলো লোকবাদী কিছু ধর্ম। পরে বাইরে থেকে বৌদ্ধমত বাংলায় প্রথম জায়গা করে নেয়। তারপর লোকবাদী মতগুলোর সমন্বয়ে উত্তর ভারতের আর্য প্রভাবে গড়ে ওঠে সনাতন ধর্মমত। ইসলাম তারও বহু পরে আসে। 

এই ইসলাম গ্রহণ করেছিলো কারা? বেশিরভাগ বৌদ্ধরা। বৌদ্ধ শ্রমণরা মস্তকমুণ্ডিত বা ন্যাড়া ছিলো। এ কারণেই আজ বাংলার কোনো অঞ্চলে মুসলিমদেরকে 'ন্যাড়া' বা 'নেড়ে' বলা হয়। প্রসঙ্গত, বলে রাখি- বৌদ্ধরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলো দুটি কারণে। ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরা বৌদ্ধদের উপর বেদবিরোধী আখ্যা দিয়ে চড়াও হয়েছিল, এবং আরেকটি যে কারণ সেটি হল কোনো কোনো মুসলিম শাসক যারা কোরাণের বাণীর পরিবর্তে তরবারি নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলো। কেবল বৌদ্ধরা নয়, বহু নিম্নবর্নের হিন্দুরা যারা এই ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুদের কুসংস্কার ও শোষণ বা বৈষম্যে দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছিলো তারাও কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করে। অর্থাৎ বাঙালি আদিতে কখনোই মুসলিম ছিলো না। যেটাকে সনাতন ধর্ম বা হিন্দু ধর্ম বলা হয় সেটাও না। 

যাহোক, এটা স্পষ্ট বাংলার মুসলিমদের আদি পরিচয় টানলে দেখা যাবে এদের কয়েক পুরুষ আগে এরা সবাই হয় বৌদ্ধ ছিল নয়তো নিম্নবর্নের হিন্দু ছিলো। ঐতিহাসিক বা ভূতাত্ত্বিক প্রমাণও মেলে এ বিষয়ে। অথচ বাঙালি মুসলিম আজ এতটাই মুসলিম হয়েছে যে, সে ধর্মের বিচারে সবকিছু যাচাই করে গ্রহন ও বর্জন করে; সেটা তার দেশজ ঐতিহ্য হলেও।

এ তো গেল ধর্ম। কিন্তু বাংলার সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য? সেটা তো ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সকল মানুষের। মঙ্গলশোভাযাত্রাও আজ বাঙালির ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শুধু পরিচিতি নয়, ইতোমধ্যে এটা ইউনেস্কোতে স্থান নিয়েছে। যদিও এই মঙ্গলশোভাযাত্রা আদি বাঙালির সংস্কৃতি নয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে যশোরে 'চারুপীঠ' এটা শুরু করে। পরে ঢাকায় শুরু হয়। এটাও সেদিনকার। মূলত মৌলবাদীরা এই অস্ত্রই ব্যবহার করে বলে এটা বাঙালি সংস্কৃতি নয়, আরোপিত। কিন্তু মঙ্গলশোভাযাত্রার যে তাৎপর্য সেটা তো গুরুত্বপূর্ণ। এটার নাম ছিলো আনন্দ শোভাযাত্রা, পরে মঙ্গলশোভাযাত্রা করা হয়। বাংলার বিভিন্ন উপাদান চিত্রিত করে উপস্থাপন করা হয়। জন্মাষ্টমী বা মহরমের শোভাযাত্রাগুলো ছিল ধর্ম কেন্দ্রিক। কিন্তু পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা হয়ে উঠলো আপামর বাঙালির। এটা না হিন্দুয়ানি, না ইসলামবিরোধী। 

আসল কথা হল, যারা মঙ্গলশোভাযাত্রার সাথে ধর্মকে মিশিয়ে বিরোধীতা করছে তারা না জানে সংস্কৃতি, না জানে ধর্মকে। এরা বাংলা শব্দ 'জল'কে পানি বলে 'জল' হিন্দুরা বলে তাই। অথচ 'পানি' সংস্কৃত বা হিন্দি শব্দ! বলতে দ্বিধা নেই, কেবল পশ্চাৎপদ রাজনীতির ধারক ইসলামী সংগঠনগুলো নয়, বেশিরভাগ মুসলিমই কিন্তু মঙ্গলশোভাযাত্রার বিরোধীতা করে। যদিও তাদের মস্তিষ্কে মৌলবাদীরাই এগুলো প্রোথিত করতে সক্ষম হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে- দিন যত এগোচ্ছে এই সংকট তত বাড়ছে। 

তাহলে ভবিষ্যৎ কী আমাদের? গান গাওয়া যাবে না, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যাবে না, পাঠ্যবইয়ে মুসলিম ভিন্ন কারো লেখা রাখা যাবে না, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া যাবে না, নববর্ষে শোভাযাত্রা করা যাবে না- এসবের ফলাফল কী? রাজনৈতিকভাবে দেশে চলছে অনেকটা তথাকথিত গণতন্ত্র। এটাকে সাসটেইনবল করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ধর্মকে। বলা চলে দেশটা মদিনা সনদের দিকেই ধাবিত হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দিকে নয়। এতে করে কেবল প্রশ্রয় পাচ্ছে ইসলামিক দলগুলো। তার মানে বাংলাদেশে ইসলামিক বিপ্লব অনিবার্য হয়ে উঠছে। আর সেটা হলে বাংলাদেশের অবস্থা হবে আফগানিস্তান বা মধ্যপ্রাচ্যর মতন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

25 মন্তব্যসমূহ

  1. সাবাশ মকলু উন্নতি হচ্ছে তোর

    উত্তরমুছুন
  2. বাংলাদেশের অবস্থা হবে আফগানিস্তান বা মধ্যপ্রাচ্যর মতন। কে ঠেকাবে????

    উত্তরমুছুন
  3. মকলু তুমি এগিয়ে চল
    আমরা আছি তোমার সাথে

    উত্তরমুছুন
  4. পাঠক সমাজের চোদন খায়া এলা হিনা তোমরা সুন্দর নেকা প্রকাশ কইচচেন
    এদন চোদন তোমার নাগে মুই বুজচোং এলা

    উত্তরমুছুন
  5. চমৎকার প্রতিবাদি কণ্ঠস্বর
    এমনটাই তো চাই

    উত্তরমুছুন
  6. কিসমত জাহান টুনিশনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩

    Suvo nobobosro
    Sompadok
    I love you

    উত্তরমুছুন
  7. সুন্দর লিখেছ সুদেবদাদা
    আমাদের জয় হবেই

    উত্তরমুছুন
  8. মৌলবাদের কালো হাত
    ভেঙ্গে দাও গুরিয়ে দাও

    উত্তরমুছুন
  9. Satpatrer mang dore rakta hoba suvokamona aundor laka

    উত্তরমুছুন
  10. হারুন সাংবাদিক প্রেসক্লাবশনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩

    মঙ্গল শো ভাযাত্রা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির কোন সুযোগ নাই৷ এটা চলছে চলবে

    উত্তরমুছুন

অমার্জিত মন্তব্য কাম্য নয়