New

শ্বেতপত্র

২০২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এর সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার অনুবাদ: সুশান্ত বর্মণ






কিছু সত্যিকারের লেখক এবং কবিদের সাথে একই সারিতে আমার নাম আসায় আমি খুবই গর্বিত।


২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে বলেন -“কিছু সত্যিকারের লেখক এবং কবিদের সাথে একই সারিতে আমার নাম আসায় আমি খুবই গর্বিত।” এই সাক্ষাৎকারে সাহিত্যের নতুন লরিয়েট লাসলো ক্রাসনাহোরকাই নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি সম্পর্কে নিজের আনন্দ প্রকাশ করেন। খবরটি তার জন্য এক আকস্মিক ও বিস্ময়কর বিপত্তি নিয়ে এসেছিল। নিজের জীবনের পরিচালক হিসেবে 'তিক্ততা' কতটা প্রভাবক ছিল সে বিষয়ে তিনি কথা বলেন। সাথে সাথে সাহিত্য ও জীবনযাত্রায় কল্পনার ব্যবহার প্রসঙ্গটিকেও তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, ফ্যান্টাসিহীন জীবন একেবারে অন্যরকম। বইপড়া আমাদেরকে এই বিরূপ পৃথিবীর কঠিন সময়গুলোতে টিকে থাকার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি দেয়। প্রথা অনুযায়ী নোবেল পুরস্কার ঘোষণা হবার অব্যবহিত পরেই পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখককে নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে ফোন করা হয়। তাৎক্ষণিক অনুভূতি ও সমকালীন বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে লেখকের মতামত পাওয়া মূল উদ্দেশ্য। নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত হাঙ্গেরিয় লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এর এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জেনি রাইডেন।


জেনি রাইডেন: হ্যালো।

লাসলো ক্রাসনাহোরকাই: হ্যাঁ।

জেরা: আমি জেনি রাইডেন, নোবেল পুরস্কার থেকে বলছি।

লাক্রা: হাই, হ্যাঁ।

জেরা: আপনি কি লাসলো ক্রাসনাহোরকাই?

লাক্রা: হ্যাঁ, আমি।

জেরা: সবকিছুর প্রথমে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাই।

লাক্রা: তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।


জেরা: এই মুহুর্তে কেমন লাগছে?

লাক্রা: এটা এক আকস্মিক অভিঘাতের চেয়ে বেশি। স্যাময়েল বেকেটের পুরস্কার পাওয়ার পর প্রকাশিত এক প্রতিক্রিয়ার কথা এখন মনে হচ্ছে। তথাকথিত রিপোর্টগুলোর কথা তোমার মনে পড়ে কী? প্রশ্ন নেই, উত্তর নেই। 'কী বিপর্যয়কর ঘটনা' -এই বাক্যটিকে তোমার মনে পড়ে কী? নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কথা জানার পর এটা ছিল এক প্রথম বাক্য। 'কী এক আকস্মিক বিপত্তি'- এই জন্য আমি প্রথমেই তোমাকে বলেছি যে এটা এক হঠাৎ ঘটা ঘটনার চেয়েও বেশি। কারণ আমি সেই বিশাল সারিতে এসেছি, যে সারিতে আমাকে আমার আসল ভাষা, হাঙ্গেরির ভাষা ব্যবহার করার শক্তি দিয়েছে এমন অনেক খাঁটি ও মহান লেখক ও কবি রয়েছেন। এই ছোট ভাষাটিকে ব্যবহার করে আমি সত্যি খুব গর্বিত ও খুব আনন্দিত। প্রথমে আমার পাঠকদের আমি ধন্যবাদ জানাই। আমি চাই প্রত্যেকে তাদের কল্পনাশক্তি ব্যবহার করার শক্তি ফিরে পাক। কারণ কল্পনাহীনতা আসলে এক সম্পূর্ণ আলাদা জীবন। আমি চাই, সবাই যেন বই পড়ে, উপভোগ করে এবং সমৃদ্ধ হয়। কারণ বর্তমান পৃথিবীর খুব কঠিন সময়ে টিকে থাকার জন্য আরও বেশি সামর্থ জোগায় বইপাঠ।


জেরা: অবশ্যই। আমাদের জন্য দৃশ্যটি আপনি বলবেন কী? এখন আপনি কোথায়? যখন পুরস্কারের কথা জানলেন, তখন কেমন লেগেছিল।


লাক্রা: আমি বন্ধুর ফ্লাটে আছি। সে অসুস্থ। ফ্রাঙ্কফুর্টে তাকে দেখতে এসেছি। নোবেল পুরস্কার যে জিতেছি, তা বিশ্বাস করতে পারছি না। কিন্তু, আমি খুব খুশী।


জেরা: আপনি কি একেবারে আশা করেননি?

লাক্রা: আমি বিস্মিত। গণনায় ধরিনি।


জেরা: আপনার প্রধান অনুপ্রেরণার উৎস সম্পর্কে কিছ বলুন?

লাক্রা: তিক্ততা। পৃথিবীর বর্তমান অবস্থার কথা ভাবলে দুঃখিত হয়ে পড়ি। এটা আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। এই বিষয়টি পরবর্তী প্রজন্ম অথবা প্রজন্মান্তরের সাহিত্যের প্রধান উদ্দীপক হতে পারে। এটা নতুন প্রজন্মকে এমন এক অনুপ্রেরণা দিবে যার প্রভাবে তারা সমকালের ভয়ানক অন্ধকার সময়ে যেকোন উপায়ে হোক টিকে থাকবে।


জেরা: যেমন বলছেন, বর্তমানের তেমন কালো সময়ে টিকে থাকার বিষয়ে লেখালেখি আপনার কাছে কতটা অর্থ বহন করে?

 

লাক্রা: আসলে লেখালেখি বিষয়টা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। যা লিখছি, সে সম্পর্কে আমি সাধারণত কিছুই বলি না। এমনকী আমার প্রিয় লেখক ও কবি বন্ধুদেরকেও দেখাই না। একটা বই লেখার পর আমি আমার প্রকাশকের হাতে তুলে দেয়ার পর নিজেকে সময় দেই। এরপর সেই দিনটি আসে, যেদিন আমি শুরু করি আর তারপর আমি আবার একটা নতুন বই লেখা শুরু করে দেই। আগে যা লিখেছি, তার চেয়ে ভাল করা শুরু করি।


জেরা: আমি শুনেছি যে আপনার বাস করার জন্য একাধিক জায়গা আছে। কথাটি কী সত্যি?

লাক্রা: এটা সত্যি। আমি এখন হাঙ্গেরিতে আছি। বুদাপেস্টের পাশে। এক পাহাড়ের চুড়ায়। আমি ত্রিস্তে এবং মাঝেমধ্যে ভিয়েনাতেও থাকি, সেই পুরনো অস্ট্রিয়ার হাঙ্গেরিয় রাজ্যে।


জেরা:  আপনি কীভাবে আপনার নোবেলপ্রাপ্তি উদযাপন করবেন?

লাক্রা: আমি, কী যেন বলে, তথাকথিত, জার্মানিতে, তথাকথিত পৌর অফিসে জানাতে যাব যে, আমি আমার অবস্থান পাল্টিয়েছি, আমার দ্বিতীয় জায়গায়। এখন আমি একজন প্রশাসকের কাছে যাব। জার্মানীতে আমার নতুন ঠিকানা, ডাক ঠিকানার কথা জানাতে হবে।


জেরা: এটাই আপনার আজকের সারাদিনের প্ল্যান? আপনি এখন এসব করতে যাচ্ছেন?

লাক্রা: আমি এইসব চমকে দেয়া খবরকে পাত্তা দিই না। সেজন্য দিনের রুটিনে কোন পরিবর্তন আনব না। হয়ত সন্ধ্যায় পোর্ট ওয়াইন ও শ্যাম্পেন সহযোগে বন্ধুদের সাথে, এই ফ্রাঙ্কফুর্টে একটি ডিনারের আয়োজন করব।

জেরা: শুনতে ভাল লাগছে। আচ্ছা, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার সাথে কথা বলাটা দারুণ উপভোগ করছি।

লাক্রা: তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। তুমি অনেক দয়ালু।

জেরা: ধন্যবাদ। আপনাকে আবারও অভিনন্দন!

লাক্রা: আবার ধন্যবাদ। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

জেরা: বাই, বাই।

লাক্রা: ধন্যবাদ, বাই বাই।


-০-

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. বাহ্ সুশান্ত তুমি খুব সুন্দর লিখেছ
    তুমি এভাবে আরো সুন্দর সুন্দর লেখা উপহার দিতে থাকো

    উত্তরমুছুন

অমার্জিত মন্তব্য করে কোনো মন্তব্যকারী আইনী জটিলতায় পড়লে তার দায় সম্পাদকের না৷