সাহিত্যে নোবেলজয়ী আনি এরনোর সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার
অনুবাদঃ সুশান্ত বর্মণ
আমি মনে করি লেখালেখি করার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল অনেক বেশি পড়াশোনা করা : আনি এরনো
আনি এরনো জন্মেছেন ১৯৪০ সালের ১ সেপ্টেম্বরে। ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের নরম্যান্ডি এলাকায়। নিম্নবিত্ত পিতামাতার ঘরে। দারিদ্রপীড়িত জীবনে মানুষের সংগ্রাম ও অপমানের চিত্র তাঁর মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছিল। বেড়ে উঠেছেন এক অপার স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে। প্রখ্যাত লেখক ও দার্শনিক সিমন দ্যা বুভোয়ারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিল। একাধিক চিঠিপত্রে নিজেদের ভাবনা বিনিময় করেছেন। পড়াশোনা সাহিত্যে। ফলে জীবনের বৈচিত্র্যময় দিকগুলো চিনতেন। আধা আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসগুলোতে এই অভিজ্ঞতাগুলোর প্রভাব সুস্পষ্ট।
১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস 'ক্লিনড আউট'। কুড়িটির অধিক বইয়ে তিনি নিজের প্রজন্মের যাপিত জীবনের টানাপোড়েন ও স্মৃতিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন। ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'দ্যা ইয়ার্স'। এই বইকে বিষয় ও কাঠামো বৈশিষ্ট্যে ফরাসী ভাষার নৈর্ব্যক্তিক আত্মজীবনীমূলক রচনাগুলোর অন্যতম বলে বিবেচনা করা হয়। বইটি ২০১৯ সালে ম্যান বুকার পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল। এছাড়াও তিনি ফ্রান্স ও ইটালির একাধিক সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। জীবনব্যাপী সাহিত্যকর্মের বিশিষ্টতার জন্য তাঁকে ২০২২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। পুরস্কার প্রদানকালে সুইডিশ একাডেমী বলেছে- "ব্যক্তিগত স্মৃতির মূলভাব, পারস্পরিক বৈপরীত্য এবং
আত্মনিয়ন্ত্রণগুলোকে দৃঢ় ও নিপুণভাবে তুলে ধরার জন্য তাঁকে নোবেল
পুরস্কারে ভূষিত করা হল।" তারা আরও জানায় যে- শ্রেণী, ভাষা ও লৈঙ্গিকভাবে
বৈষম্যপীড়িত জীবনকে তিনি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করে
চলেছেন।
এই
সাক্ষাৎকারটি নোবেল পুরস্কার ঘোষণার দিন ৬ অক্টোবর ২০২২ তারিখে রেকর্ড করা
হয়। সাক্ষাৎকার নেন নোবেল পুরস্কারের বহির্বিভাগের ক্লেয়ার প্যাটকৌ। তার
সাথে আলাপচারিতায় আনি এরনো তরুণদের লেখালেখি করতে গিয়ে সৎ থাকার গুরুত্ব
সম্পর্কে উপদেশ দেন। রান্নাঘরে কাজ করতে করতে রেডিওতে নিজের নোবেল
প্রাপ্তির ঘোষণা শোনেন- বিষয়টি কেমন লেগেছে সাক্ষাৎকারে তাও বলেন। নিজের এই
অর্জনের অনুভূতি প্রকাশ করেন এভাবে - নিঃসীম মরুভূমিতে আকাশ থেকে যেন বার্তা
এল, এমনটিই আমার অনুভূত হয়েছিল।
- বাংলায় রূপান্তরের জন্য সাক্ষাৎকারটি সংগ্রহ করা হয়েছে nobelprize.org ওয়েবসাইট থেকে।
- নোবেলজয়ী Annie Ernaux এর নামের উচ্চারণ নিয়ে বাংলাভাষীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। 'আনি এরনো' উচ্চারণটি চিন্ময় গুহ'র মতামত থেকে গ্রহণ করা হল।
=-=-=-==-=-=-=
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: শুভ দিন, অবশ্য শুভ বিকেলও বলা যায়। আমি কি আনি এরনোর সাথে কথা বলছি?
আনি এরনো: হ্যাঁ, এটা আমিই। হ্যাঁ, শুভ অপরাহ্ণ।
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: শুভ অপরাহ্ণ। আমার নাম ক্লেয়ার প্যাটকৌ। প্রতি বৎসর নোবেলজয়ীর একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার নেয়ার ঐতিহ্য চলে আসছে। চটজলদি দুয়েকটা কথা বলার জন্য আপনাকে পাব কি?
আনি এরনো: এখন?
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: হ্যাঁ, এখনই।
আনি এরনো: আচ্ছা, হ্যাঁ, অবশ্যই, অবশ্যই।
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: প্রথমে নোবেল পুরস্কার পাবার জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাই। বুঝতে পারছি এইমাত্র একটা সংবাদ সম্মেলন শেষ করলেন।
আনি এরনো: হ্যাঁ।
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: কেমন লাগছে তা জানতে পারি কি? মনে হচ্ছে বেশ ব্যস্ত দিন কাটালেন?
আনি এরনো: হ্যাঁ, দুপুর একটার সময় যখন পুরস্কার প্রাপ্তির কথা জানলাম, ততক্ষণে দিন অর্ধেক পার হয়ে গেছে। আর সংবাদ সম্মেলন ভাল হয়েছে। কারণ আমার ধারণা, নোবেল প্রাপ্তির বিষয়টি আমার কাছে কীরকম অর্থবহ তা ঠিকভাবে বলতে পেরেছি। এটা তো এক বিশাল সম্মানের সাথে বিরাট দায়িত্বের ব্যাপারও। আর এই সম্মানের কারণে লেখালেখি বিষয়ে আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: তো, খবরটি পাওয়ার সময়, যখন একটা বাজে, তখন আপনি কোথায় ছিলেন?
আনি এরনো: শোন, তখন আমি রান্নাঘরে ছিলাম। সেখানে একটা রেডিও আছে। আর, কে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছে তা জানার জন্য রেডিও শুনছিলাম। আর এইতো!
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: আর এটা আপনি।
আনি এরনো: হ্যাঁ, এটা আমি।
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: কী মজার উপায়েই না খবরটা পেলেন!
আনি এরনো: হ্যাঁ, এটা আমাকে অবশ্যই অবাক করেছে। আরও বেশি মজার, কারণ আমি একা ছিলাম। এটা যেন… আপনাকে তুলনাটা বলি। মনে করুন, একটা মরুভূমিতে আছেন, এমন সময় আকাশ থেকে এক বার্তা নেমে এল। সেসময়ের অনুভূতি এমনই ছিল।
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: কী মজার কাহিনী। যাহোক, আপনার রচনাসম্ভার বেশ দীর্ঘ। কেউ যদি আপনার লেখাগুলো আবিষ্কার করতে চায়, তাহলে তিনি কোত্থেকে শুরু করবেন?
আনি এরনো: আপনি জানেন, নিজের বইগুলোকে আমি একই রকম মনে করিনা। বিষয় ও প্রকরণের দিক থেকে, কখনও কখনও উদ্দেশ্যের দিক থেকে তো বটেই। অতএব এটা বলা একটু কঠিন, এছাড়া তরুণ ও প্রবীণের জন্য পরামর্শ ভিন্নরকম হওয়া স্বাভাবিক। তবে সকলকে একই সুতায় যে বইটি বাঁধতে পারে, তা হল 'দ্যা ইয়ারস'। হ্যাঁ, এটাই।
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: আচ্ছা। আপনি তরুণদের কথা উল্লেখ করলেন। তরুণ লেখকদের কোন পরামর্শ দেবেন কি? বিশেষ করে যারা মাতৃভাষায় লেখালেখি করছেন।
আনি এরনো: আমি মনে করি লেখালেখি করার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আমাদের প্রচুর পড়াশোনা করা দরকার। তরুণরা কখনও কখনও বলে 'ওহ, না। আমি পড়ি না… আমি লিখি।" না, এটা সম্ভব না। আপনাকে অনেক পড়তে হবে। আর দ্বিতীয় যে পরামর্শটি দেব, তা হল ভাল লেখার জন্য চেষ্টা না করার। বরং সততার সাথে লিখুন। দুটো এক জিনিস নয়।
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: বা! কী সুন্দর পরামর্শ।
আনি এরনো: তাই?
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: আমার সাথে কথা বলার সময় দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা ডিসেম্বরে আপনার সাথে স্টকহোমে দেখা হওয়ার আশা করি।
আনি এরনো: হ্যাঁ!
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: আপনাকে আবারও ধন্যবাদ এবং আমার পক্ষ থেকে অশেষ অভিনন্দন।
আনি এরনো: আপনাকেও ধন্যবাদ।
ক্লেয়ার প্যাটকৌ: বিদায়।
আনি এরনো: বিদায়।
8 মন্তব্যসমূহ
চমৎকার
উত্তরমুছুনমকলু এবার ভাল কাজ করেছে৷ অপদার্থ সম্পাদকের উন্নতি দেখে ভাল লাগল
উত্তরমুছুনঅপদার্থরা ঘটনার গভীরে না গিয়েই মন্তব্য করে বসে। আসল কথা হল যে অপদার্থ সে অন্যকে অপদার্থ ভাবে। দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করেন, না জেনে, না বুঝে অল্প বিদ্যা জাহির করতে যাবেন না।
মুছুনজয় গুরু
মুছুনখুব ভালো লাগলো। এগিয়ে যান দাদা।
উত্তরমুছুনসুন্দর কাহিনি। পড়ে ভাল লাগল। অনেক কিছু শিখলাম। সম্পাদককে এজন্য ধন্যবাদ জানাতে চাহিয়াও জানাইলাম না। কার সে এই লেখা আগে ছাপায় নাই কেনু? তাহলে আমরা অনেক আগে অনেক কিছু শিখতে পারতাম। এই মিষ্টি লিখাটা পড়তে পারতাম। আসলেই সম্পাদক অযোগ্য
উত্তরমুছুনসম্বাদক তুমি জাতে উঠছ একন৷লেগে থাক
উত্তরমুছুনsundor
উত্তরমুছুনঅমার্জিত মন্তব্য করে কোনো মন্তব্যকারী আইনী জটিলতায় পড়লে তার দায় সম্পাদকের না৷