"আমরা গরিব দেশের মানুষ, এত পয়সা খরচ করে ওদের দেশে যাব কেন? ওদের অনেক পয়সা, ওরা এসে আমাদেরটা দেখে যাক।"
— যামিনী রায়
একবার শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে তাঁর স্নেহধন্য ছাত্রছাত্রীরা ইউরোপীয় আর্টের রীতিতে সড়গড় হতে পোট্রেট থেকে ক্ল্যাসিক্যাল ন্যুড, তেল-রং এর ছবি আঁকা শিখছে। অবনঠাকুর তখন আর্টস্কুলের ভাইস-প্রিন্সিপাল। প্রিন্সিপাল একজন সাহেব। একদিন সাহেব ক্লাসে ঢুকলেন ছাত্রদের কাজ দেখতে। ক্লাসরুমে ঢুকেই তিনি চমকে ওঠেন। দেখেন যে একটি ছাত্র জানালার খড়খড়ি তুলে বাইরের দৃশ্য দেখছে। তিনি তখন ছাত্রটিকে ডেকে বলেন, ‘তুমি এভাবে সময় নষ্ট করছ!’ একথা শোনার পর তরুণ ছাত্রটি সপ্রতিভভাবে উত্তর দেয়, ‘ক্লাসে প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে বলা হয়েছে। বাইরের দৃশ্য তো বিরাট বিশাল, তাই তাকে খড়খড়ির ফ্রেমে আটকে দেখছি।’ সাহেব একথা শোনার পর আর কিছু বলেননি।
এই ছাত্রদেরই ইতালীয় শিক্ষকের ক্লাসে প্লাস্টার মডেল নকল করতে হত। ছাত্ররা বসত খুব নিচু বেঞ্চে আর ইতালীয় শিক্ষক ছিলেন লম্বা চওড়া। ক্লাসে ছাত্রদের কাজ দেখার জন্য টহল দিতেন তিনি। ঘাড় নিচু করে কাজ দেখতে দেখতে ‘এটা ঠিক হয়নি’, ‘ওটা এমন হবে না’ জাতীয় মন্তব্য করতেন। একদিন সেই ছাত্রের কাজ দেখে এমন মন্তব্য করলে ছাত্রটি উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিল, ‘আপনি দাঁড়িয়ে ওই উচ্চতা থেকে আমাদের সব কাজ দেখছেন আর দেখুন তো আমরা কত নিচুতে বসে কাজ করছি। ফলে আপনার দেখা আর আমাদের দেখা তো দু-রকম হবেই। আমরা কি করে আপনার দেখাটা দেখব বলুন।’ ছাত্রের এহেন উত্তরে সেদিন সাহেব নীরবতা পালন করেছিলেন। এই ছাত্রটি হলেন 'যামিনী রায়'।
আধুনিক চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায় এক প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী। চিত্রশিল্পকে জাদুঘরের দেওয়াল থেকে মধ্যবিত্তের চার দেয়ালের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনিই। যে সমস্ত চিত্রশিল্পী আন্তর্জাতিক মহলে দেশীয় চিত্রকলার ঐতিহ্যকে প্রদর্শন করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলেন যামিনী রায়। স্বদেশের প্রত্যন্ত ও অবহেলিত লোকসংস্কৃতিকে তাঁর বলিষ্ঠ তুলির আঁচড়ে ও রঙের মাধুর্য দিয়ে ভরিয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মান প্রদান করেছিলেন।
যামিনী রায় বিদেশি ভাবধারায় প্রথম দিকে ছবি আঁকলেও পরবর্তীতে সম্পূর্ণ দেশীয় তথা গ্রামবাংলার প্রতিরূপ তার ছবিতে ফুটে উঠেছে। নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তার লক্ষ্যে তিনি লোক ও নৃগোষ্ঠীদের সংস্কৃতি বেছে নেন। নিজস্ব বাঙালি সংস্কৃতি ও ভাবধারার জন্য তিনি গর্বিত ছিলেন। তিনি বহুবার বিদেশ থেকে আমন্ত্রণ পেলেও কখনও বিদেশে যাননি।
তাঁর প্রত্যেকটি ছবিতে বাংলার সাধারণ সমাজের ধর্ম, আচরণ, শিল্পকলা, সাংস্কৃতিক বিশ্বাস নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। বাংলার উদ্ভিদজগৎ, প্রাণিজগৎ, প্রাকৃতিক জগৎ নিজের স্বরূপে ফিরে পেয়েছিল যামিনী রায়ের চিত্রশিল্পে। তিনি ছবি আঁকার উপকরণ হিসেবে খড়িমাটি, ভুসাকালি, ইটের গুঁড়া, কাজল, লাল সিঁদুর, সাদা খড়ি, আলতা, কাঠ-কয়লা ইত্যাদি ও বিভিন্ন লতাপাতার রস ব্যবহার করে থাকতেন। আটপৌরে কায়দায়, প্রসাধনহীন সরলরেখায় এবং মাটির রং দিয়ে তাঁর ছবি ছিল বর্ণিত। তিনি তাঁর শৈলীর নাম রেখেছিলেন, 'ফ্ল্যাট টেকনিক'।
আজ যামিনী রায়ের চলে যাবার দিন। পঁচাশি বছর বয়সে, ১৯৭২ সালের ২৪ শে এপ্রিল তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।
সূত্র: অনলাইন
13 মন্তব্যসমূহ
সুন্দর লেখা
উত্তরমুছুনএরকম লেখা বেশি করে প্রকাশ করবা চোটভাই
আপনার মন্তব্য দারুন লাগলো
মুছুনবাহ দারুণ একটা গল্প পরলাম
উত্তরমুছুনহৃদয ছুয়ে গেল
ধন্যবাদ
মুছুনএজন্য আমি মরলুকে এত ভালবাসি
উত্তরমুছুনসে একটা কিউটের বস্তা
আপনি লেখা নিয়ে মন্তব্য করলে খুশি হই। কিসের মকলু, কিউটের বস্তা, ভালবাসি এসব বন্ধ করুন।
মুছুনবাহে সম্পাদকের ব্যাটা সুন্দর নেকা প্রকাশ কইচ্চেন
উত্তরমুছুনতোমার উন্নতি হবার নাকচে
তোমারও উন্নতি হইছে
মুছুনযামিনি রায়ের অনেক কবিতা পড়েছি ৷ তিনি বড় কবি ৷ আল্লাহ তাকে নেক হায়াত দান করুন
উত্তরমুছুনতুমি খুব সুন্দর গল্প লিখেচ ওগো সম্পাদক ৷ তোমাকে ১০টি চুমু
উত্তরমুছুননা আমি লিখিনি
মুছুনতাহলে চুমু ফেরত
মুছুনইনার চিত্রকলা দারুণ লাগে৷ তার সম্পর্কে লেখা প্রকাশ করা ভাল হয়েছে৷
উত্তরমুছুনঅমার্জিত মন্তব্য করে কোনো মন্তব্যকারী আইনী জটিলতায় পড়লে তার দায় সম্পাদকের না৷