যখন কোনও জাতি বা জনগোষ্ঠী তাদের স্বদেশভূমি থেকে অন্যত্র বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই ব্যাপারটিকে বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন বা 'ডিয়াস্পোরা' বলা হয়।সাধারণত বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন পরিভাষাটি দ্বারা কোন জনগোষ্ঠীর তাদের স্বভূমি থেকে অনৈচ্ছিকভাবে ছড়িয়ে পড়াকেই বোঝানো হয়।
ইজরায়েল থেকে ইহুদিদের ছড়িয়ে পড়া এবং কনস্টান্টিনোপল থেকে গ্রিকদের পালিয়ে যাওয়া এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ইজরায়েলের বাইরে বসবাসকারী ইহুদি সম্প্রদায়; আসল জন্মস্থান বা মাতৃভূমি ছেড়ে অন্য জায়গায় বা দেশে বসবাসকারী লোকজন হলেন অভিবাসী।
আমরা বাঙালিরা এমনই এক হতভাগ্য জাতি যাদের সিংহভাগ হঠাৎ আবিষ্কার করল যে তাদের বাপ দাদার ভিটে,মাটি ,দেশ আর তাদের নয়।নিজেদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রতিবেশী দেশে বা অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছিল তারা সেই সাতচল্লিশের দেশভাগের আগের থেকে,যেই 'এক্সোডাস' আজ সত্তর বছরের পরও অব্যাহত, অবিরত।
কবি শঙ্খ ঘোষ এমনই এক পরিবারের সন্তান,যে পরিবার ছেচল্লিশ সালে দেশভাগের প্রাক্কালে পাবনা জেলার পাকশি নামের ছোট শহর ছেড়ে এদেশে আসেন। ওঁর আসল দেশ ছিল বরিশাল জেলার বানুরিপাড়া গ্রামে। সেখানে পেয়েছিলেন সন্ধ্যা নদীর সান্নিধ্য।তাই তাঁর লেখায় জলের প্রতি এক আশ্চর্য টান দেখতে পাই, যা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বয়ে গেছে।পিতা মনীন্দ্র নাথ ঘোষ ছিলেন পাকশি চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠের সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক। সেখানেই কবি বিয়াল্লিশ সাল থেকে ছেচল্লিশ সাল মানে ওঁর ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।
তাঁর কৈশোরের দেশান্তরী হওয়ার বেদনা তাকে চিরজীবন কাঁদিয়েছে।তাই তো এমন কাব্য আমরা পাই,--
শরীরে হঠাৎ ফেরে কৈশোর
মাটিতে ছোঁয়ালে পা
আর কোনদিন তোমার ঘরের
ত্রিসীমায় যাব না।
লতায় লতায় জড়িয়ে উঠেছে
অবাধ সবুজ স্মৃতি
শিরার ভিতরে নৌকোনদীর
সংঘাত আজও ঠিকই!
নবতিপর জীবনে কবি এই ব্যাথা বয়ে বেড়িয়েছেন তাকে আমরা ডায়াস্পোরার কান্না ছাড়া কিই বা বলতে পারি? দেশত্যাগের সেই নাড়ি ছেড়ার বেদনা তার লেখা পদ্যে, প্রবন্ধের ছত্রে ছত্রে প্রতিভাত। তাই তিনি বলেন,--
কোন দেশে রে মাঝি সাহেব কোন দেশেতে টান
সেই দেশও কি আমারই দেশ,সেই দেশও কি প্রাণ?
সেদিনের দেশান্তরী পরিবারগুলোর কাহিনি ছিল মোটের ওপর একই রকম,--এক্সোডাস,একজাইল,ডিয়াস্পোরার দুঃখ, কষ্ট,পতন,অভ্যুদয়ের কথা।
কিন্তু এই দেশে এসেও রয়ে গেলেন উদ্বাস্তু, আউটসাইডার।আসলে দুটো ঘটনা তো একসাথে ঘটা সম্ভব নয়। আগের দেশে পড়ে রইল জীবনের এক খন্ড, আবার এই প্রান্তে পাওয়া গেল এক অবাঞ্ছিত উদ্বাস্তুর জীবন, যেখানে কেউ তাঁকে চায় না।তাই তিনিই বলতে পারেন,--
' এই কলকাতাটা আমার, আবার আমার নয়। হঠাৎ করে নিজেকে যেন কেন অপরিচিত মনে হয়।'
আবার এদেশের অবজ্ঞায় তাঁরই মুখ ফুটে ধ্বনিত হয় সেই অমোঘ উক্তি,-
-'আরও কত ছোট হব হে ঈশ্বর!
ভিড় এর মধ্যে দাড়ালে,
আমি কি নিত্য আমারও সমান??
শহরে বাজারে আড়ালে ।'
আমার পরিবারেরও ভিটে ছিল দেশভাগের আগের বৃহত্তর বরিশাল জেলার ঝালকাঠি সংলগ্ন বাগমরা গ্রামে। সেখান থেকে আমার পিতামহ বরিশাল সেটেলমেন্ট অফিসে বড়বাবু হিসেবে কাজ করতেন।সেযুগে সরকারি বড়বাবুর আলাদাই সন্মান ছিল।সেই গ্রামে সরকারি বাবু ওই একঘরই ছিল।দাদামশাই ছুটির দিনেও আশেপাশের গ্রামের সালিশি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। এলাকার লোকজন তাঁকে মান্য করত।
আমার বাবার বহুদিনের ইচ্ছা বরিশালের বি এম কলেজে আই এ তে ভর্তি হওয়ার। কীর্তিপাশা ইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে হলেন বি এম কলেজে ভর্তি। কিন্তু কপালের ফের থাকলে যাবে কোথায়।সেই পুলিশ , দারোগা কি তাকে অত সহজে ছাড়বে? লেগে গেল পেছনে, হুলিয়া জারি করা হল বাবার নামে। তিনি তো তখন পুরোদস্তুর সন্ত্রাসবাদী স্বদেশীর দলে নাম লিখিয়েছেন। পড়া উঠল মাথায়, পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন। ওঁর খোঁজে গ্রামের বাড়িতে পুলিশ আসত অহরহ।দাদামশাই এতে অত্যন্ত বিব্রত বোধ করতেন, তখন তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন।রাগে নিজের কপালের ওপর দোষারোপ করতেন আর বলতেন,---
-- 'অমন ছেলে যেন কারো না হয়।এই ছেলে কে আমি ত্যাজ্যপুত্র করলাম।'
আবার কোনদিন রাতের অন্ধকারে যখন খবর পেতেন যে সেই ছেলে ধূমকেতুর মতো উদয় হয়েছে তখন তাঁরই আনন্দের সীমা থাকত না।
তবে কখনো বুঝতে দিতেন না সেই অনুভূতি। সবসময় গাম্ভীর্য মুখময়।বাড়িতে আর বরিশালে পুলিশের উপদ্রব এতই বাড়াবাড়ি রকমের হয়েছিল সে সময় যে বাড়িতে টিকটিকি লাগিয়ে রাখা হয়েছিল ওঁর গতিবিধির ওপর নজরদারি করতে।বাধ্য হয়ে অবিভক্ত বঙ্গ ত্যাগ করেন তিনি।
বাবা তারপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর সময় মিলিটারিতে যোগ দিলেন,চলে গেলেন মধ্য প্রদেশে।তারপর অনেক ঘাটের জল খেয়ে দেশভাগের পর ওঁর কলকাতায় পুণরায় আগমন। এদিকে বরিশালের বাড়িতে এক মুসলমান প্রতিবেশীকে বসিয়ে, বাড়ির সকলে তখন কলকাতায় আশ্রয় খু্ঁজছে।
দেশভাগ না কলজেভাগ?------- তুই তুই মুই মুই :-
সেই দেশভাগ সাতচল্লিশের। ছেচল্লিশে যুদ্ধ থেমে গিয়েছে। কিন্তু মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবার ভেঙে চুরে তছনচ হয়ে গেল।বাবা যদি থাকে বরানগরে , মা থাকছেন অন্য ভাইয়ের সংসারে বিজয়গড়ে, ছোট ছেলে কসবায় ,তো বড়ছেলে যাদবপুরে কিংবা টালিগঞ্জে।একই সংসারের ছাতার তলায় বড় হওয়া সবাই হঠাৎ পরষ্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, দিশেহারা হয়ে পড়ল।
আমার মেজজ্যাঠা তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে পরামর্শ করে এদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। তখনও দাদামশাই ওদেশে রয়ে গেলেন আমার বড়পিসিমার সাথে।আসলে তিনি তো ওদেশের পেনশন পেতেন।
পরে ওদেশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তারপর এদেশে ওঁকে নিয়ে আসা হয়। পঞ্চান্ন সালে এদেশে এসে মারা যান তিনি। বরিশালের বাড়িতে আর কোনদিন কারুরই ফিরে যাওয়া হয় নি।
উনিশশো সাতচল্লিশ।অগনিত মানুষের স্রোত ভাসতে ভাসতে এসে নোঙর করেছিল বাঁশবন ও জঙ্গলভরা মহানগরী কলকাতার দক্ষিণের জনমানবহীন অঞ্চলে। স্বাধীনতার মূল্য দিতেই বেরিয়েছিল নতুন নীড়ের সন্ধানে। অশেষ লাঞ্ছনা দুঃখ কষ্ট সহ্য করে এসে একটু একটু আশা নিয়ে-- বাঁচবার আশা নিয়ে-- জীবনের অস্তিত্ব জিইয়ে রাখার তাগিদে।সহায় সম্বলহীন মানুষের নতুন জীবনের স্বপ্ন।
তারপর একদিন স্বপ্ন হল মুকুলিত।চোখের পাতায় নাচল হাসি। নতুন জনপদ গড়ে উঠল। কত রকমের নাম,-- আজাদগড়,বিজয়গড়, নেতাজী নগর, বাঘাযতীন, অশ্বিনী নগর, সমাজগড় --আরো কত রে নাম। নবজীবনের ফুল ফোটাতে দিতে হয়েছে অনেক মূল্য-- উৎস্বর্গ করেছে অনেক কোমল প্রাণ।
অনেক চেষ্টার পর কলোনি রাজনীতির প্রভাবে আমার জেঠার পরিবারের জন্য ব্যবস্থা হল একফালী জমির। কলোনির নাম নেতাজীনগর। সেখানে একটি টিনের ব্যারাকঘর।
তখন এই নেতজীনগরের মতো জায়গায় দিনের আলো ফুটত পুলিশের গুলির শব্দে-- দিনের আলোয় চলত দস্যুতার তান্ডব, ভাঙ্গনের গান,একশো চুয়াল্লিশ ধারার অসীম কেরামতি। কিন্তু বাধাবন্ধনহীন প্রাণের বন্যায় মুখর হয়ে উঠত অঞ্চল লক্ষ মানুষের কন্ঠের ফিসফাস আওয়াজ। দুর্জয় শপথের বানী শঙ্খে শঙ্খে ছড়িয়ে পড়ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্রতিটি কুঁড়েঘরে।
শঙ্খের আওয়াজ ,হুলুধ্বনি একত্র করে দিত অন্ধকারে রেখে জীবনগুলোকে। জীবনের সকল প্রকার সুখসুবিধা থেকে বঞ্চিত এই মানুষ বিদ্যালয় গড়েছে।হাট বসিয়েছে। মানুষের অন্নের সংস্থান করেছে।পাড়ায়, পাড়ায় রাস্তা বানিয়েছে, ড্রেন কেটেছে, জঙ্গল পরিষ্কার করেছে। মনুষ্য বাসের অনুপযুক্ত এক বিরাট অঞ্চলকে বাসের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা তো খুব সহজ কাজ ছিল না। তাদের না ছিল অর্থের বল না সরকারি উদ্যোগ।অপরিমেয় মনোবলকে সঙ্গী করে এই উদ্যোগ ইতিহাসে স্থান পাবার যোগ্য। কিন্তু এ দেশের ইতিহাস দেশ গড়ার ইতিহাস নয়। এদেশের ইতিহাস ব্যক্তিচরিত্রের খেয়ালখুশি চরিতার্থ করার ইতিহাস। এখানে নেতৃত্ব বানী দিয়েই খালাস-- জনমানসের সঙ্গে এক হতে অপারগ। পুলিশ ও আমলারা তাদের একমাত্র ভরসা। জনগণ সেখানে অচ্ছুৎ।মুখে অহিংসার বুলি। কাঁধে দেশপ্রেমের নামাবলী-- সাথে লক্ষ মানুষকে পায়ের তলায় পেষন।এই ছিল নেতাদের রূপ।
এরই মধ্যে আমার বাবা নামমাত্র মাইনেতে এলাকার নবগঠিত উদ্বাস্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেন।আমার বাবারও ওই একই রকমের অভিব্যক্তি ,-- কোনদিন যে কোন পরিস্থিতিতেই মুখমন্ডলে গাম্ভীর্যের অভাব ঘটে নি।হাসি কদাচিৎ দেখা দিত। আসলে সেই ডিয়াস্পোরার যন্ত্রণা শুষে নিয়েছিল সব অভিব্যক্তি।
সবাই তো বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষ হন না। তিনি যে সেই দেশান্তরের কান্নাও অমন সুন্দর ভাষায় বাঁধেন,-
ধীরে নৌকা বাও মাঝি রে
কান্না শুনো না---
নাড়ীর বাঁধন ছেঁড়ার মতন এমন কী আর রা?
প্রতি পদে পদে ওই পরিবারের বেদনার সঙ্গে আমার পরিবারের বা এপারে চলে আসা শত শত পরিবারের এত মিল ? সেই একই ডিয়াস্পোরার কান্না?
তাই তো তিনি আবার লেখেন,-
তুমি আমার ভৈরবী গান
কিম্বা ভোরের খোলা আজান
জলের কোণে সারিগানের রেশ
তুমি আমার চিরকালীন
একলা থাকার দুঃখেতে লীন
তুমি আমার হারিয়ে যাওয়া দেশ।
উদ্বাস্তু মনের ঘরখোঁজার গল্প যেন কুরে কুরে খেয়েছে এই সব পরিবারকে দিনে পর দিন।
এদেশে আমার ছোটবেলা থেকে দেখেছি আমাদের ভাড়াবাড়ি। বাবা মা দুজনেই সেযুগের উদ্বাস্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এদেশে তখনও নিজেদের মাথা গোঁজবার ঠাঁই নেই। কিন্তু একটি নিজের বাড়ির কি অদম্য প্রচেষ্টা,কি আকুল আকাঙ্ক্ষা!! বাবা মা কি ভীষণ পরিশ্রম করছেন একটু বেশি আয় কি করে করা যায়, সংসারটাকে আরো একটু স্বচ্ছল রাখা যায়। বাবা কোন বন্ধুর পরামর্শে একটি ওষুধের দোকান দিলেন,মানে বাঙালির ব্যবসা। বেশ চলছিল সে দোকান, কিন্তু বাঙালির ব্যবসা তো, নকশাল গন্ডগোলের মুখে নতুন দোকান খোলার একটি ভুল সিদ্ধান্তে ব্যবসায় ভরাডুবি ঘটল। বাজারে দেনা হয়ে শেষে ঢাকের দায়ে মনসাই বিক্রি হল। পুরোনো চালু দোকানের ব্যবসা লাটে উঠল, দোকান বিক্রি করে ধার শোধ করতে হল ব্যাঙ্ককে।
বাবাকে দেখতাম বেশ কয়েকটি টিউশনি করতেন। ব্যবসা ভুলে আবার বাঙালির চিরাচরিত প্রফেশনে ফিরে আসা।মা ইস্কুলে চাকরি এবং সংসার সামলে আর টিউশনি করতে পারতেন না। আমাদের তখন বড়মা, পিসিমা,ছোড়দাদের নিয়ে বড় সংসার।
এদেশে আসা অবধি টালিগঞ্জ,নাকতলা অঞ্চলের বেশ কয়েকটি ভাড়াবাড়ি বা বাসাবাড়িতে থেকেছিল আমাদের পরিবার। অবশেষে আশি সালে কেনা একফালি জমিতে তিরাশিতে তৈরি হল একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই ।
তার আগে এই তিরিশ বছর শুধুই ভাড়াবাড়িতে ফেলে আসা পদচিহ্ন গোনা ছাড়া আর কিছু নয়।সত্তরের দশকের শেষ দিকে শুরু হয় নতুন একটুকরো জমি পাবার চেষ্টা।কত ভালো ভালো বাড়ি ও জমির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায় কেবল অর্থের অপ্রতুলতার কারণে। যাদের দেশের বাড়িতে ছিল বিঘা বিঘা জমি, তারা এদেশে একছটাক জমি পাবার জন্য হন্যে হয়ে ফিরেছিল। মনে পড়ে, বাবা যখন বাড়িতে জমি জায়গা সম্পর্কে কোন আলোচনা করতেন তখন বড়মা পিসিমাদের চোখগুলো কেমন চিকচিক করে উঠত। বড়মাকে দেখতাম কেমন কান পেতে শোনার চেষ্টা করতেন সেসব কথা। তখন তো বুঝতাম না,কেন ওরা এমন করতেন। পরে বড় হয়ে বুঝলাম,যে আসলে ছিন্নমূল অবস্থায় এদেশে থেকে একটুকরো জমি প্রাপ্তিকে, এদেশে অধিকার প্রতিষ্ঠাই মনে করতেন ওঁরা।এ যেন এক বিরাট এক উত্তরণ এক টুকরো জমির অধিকারী হওয়ার লক্ষ্যে।
ওইরকম প্রাপ্তিতে সন্তুষ্টি হয়েছিল পরিবার গুলোর ।তাই তো কবি বলেন,
হঠাৎ ঝাঁপে উলটে যাবেন
শক্ত হাতে ধরুন।
খুব যে খুশি পা-দানিতেই
কেই বা চায় দুঃখ নিতে--.
যা পেয়েছেন দেখুন ভেবে
নাক না ওটা নরুন।
এই নাকের বদলে নরুন প্রাপ্তির কাহিনী তো তখন ঘরে ঘরে।
তাই আজও বাবার পুরোনো কাগজের স্তূপের মধ্যে পাই সেই ফেলে আসা আখরে অতীতকে ফিরে পাওয়ার আকুতি :-----
'বরিশালের স্টীমার ঘাট,
রূপসার কোল ঘিরে
ঝালকাঠির ঝাউবন,
করিম চাচার রসের হাঁড়ি,
আম কাঁঠালের নিমন্ত্রণ।'
বাবার বিদায়ের পনের বছর পেরিয়ে এসেছি। কিন্তু সেই 'ডিয়াস্পোরা'র হাহাকার আজও এই আমার মানে পরবর্তী প্রজন্মেরও বুকে গভীর ভাবে বিঁধে আছে।আজ কবি শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণেরও কয়েক বছর পর সেই হাহাকার যেন বহুগুণ বেড়ে গেছে।এ যেন এক বিপুল শূন্যতা! অগাধ ভ্যাকুয়াম!!
তাই এই বর্ষার আবহে আবার ফিরে ফিরে আসে সেই ছেড়ে আসা দেশের স্মৃতি,যে দেশ কোনদিন ছিল,আজও আছে -- কিন্তু আমাদের অনেক কাঁটাতার ডিঙিয়ে তার হদিস করতে যেতে হবে।আমি আজও বসে আছি সেই বাধা বল্গাহীন দিনের আশায় যেদিন কবি শঙ্খ ঘোষের সাথে আমিও হেঁটে যাব সীমান্ত বিহীন পথে।
যেখানে নিশ্চয়ই কবিবন্ধু হারুন অপেক্ষায় আছে আজো,যে বলেছিল,-- আসিস কিন্তু আবার, সামনের বার।কিরে আসবি তো?----
সুদীপ দাশ
মেটাল বক্স হাউসিং এস্টেট
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ।
1 মন্তব্যসমূহ
অসাধারণ প্রবন্ধ পরলাম ৷প্রবন্ধের মর্মকথা আমার হৃদয়ের দিলকাবায় যেন টিআরশেল মেরে দিল
উত্তরমুছুনঅমার্জিত মন্তব্য করে কোনো মন্তব্যকারী আইনী জটিলতায় পড়লে তার দায় সম্পাদকের না৷