ডুয়ার্সের এক চা বাগান ও জঙ্গল ঘেরা জনপদের বিচিত্র সব রংদার মানুষজনের উষ্ণতায় সোমবারের হাট দেখা, মোরগ লড়াই দেখা, আদিবাসী সংস্কৃতি, লোকসঙ্গীতের তীব্র এক মায়ার ভিতর দিয়ে বেড়ে ওঠা ওপার বাংলার কবি সুবীর সরকারকে নিয়ে কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা 'একালের কবিকণ্ঠ' সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।
সম্পাদক অভিমান্য পালের সম্পাদনায় আজ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, কোচবিহার রাসমেলা ময়দানে তোর্ষা সাহিত্য সংস্থা আয়োজিত লিটিল ম্যাগাজিন মেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে৷
খবরটি জানার পর থেকেই সত্যিই কি যেন এক ভালোলাগা অনুভূত হচ্ছিলো! ভাবছিলাম এপার- ওপার দুই বাংলার সীমারেখায় ইট- পাথরে পেরেক ঠুকানো না থাকলে, উপস্থিত হতাম সেই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে। যখন- তখন যাওয়া আসা যেহেতু সম্ভব নয়, তখন আর কিবা করার আছে, নিজের মগজে বৃদ্ধাঙ্গুল ও অনামিকার জুটিবন্ধনে তিন টোকা মেরে উপরে তাকিয়ে ভগবানের কাছে জানতে চাইলাম 'হে ভগবান কোন চুক্তিতে আমাদের পেরেক মারলেন। আমরা মানুষ পাখির কাছেও তো কিছু শিখতে পারলাম না। তার চেয়ে ভালো হতো পাখির মতোই সৃষ্টি করতেন।
আজ যদি পাখি হতাম সেদিনের মতো সুবীরদার সাথে হাত মেলাতে পারতাম, বুক মেলাতে পারতাম, হোটেল রেস্তোরাঁয় একই টেবিলে বসে খাইদাই শেষ করে রাতদুপুর জম্পেশ আড্ডা জমাতাম। যেমন করে আড্ডা জমায় সুন্দর বনের ময়না- টিয়া অন্যসব পাখির দল।
বড়ই আসসোস! সেটা আর হচ্ছে না। আমরা এপারে সুবীরদা ওপারে। মাঝখানে ইট পাথরে পেরেক ঠুকানো কংক্রিটের শরীর লেপ্টে থাকা মোছপাকানো কাঁটাতারের বেড়া।
যতোই আফসোস থাক না কেন, আমি মনে করি "যে থেকে যায়, হৃদয়ে থেকে যায়"।
বলছিলাম ওপারের কবি সুবীর সরকারের কথা।আজকের এই খুশির মাহেন্দ্রক্ষণে যে কথা না বললেই নয়, আমি যতটুকু সময় কবি সুবীর সরকারকে দেখেছি চিনেছি জেনেছি সত্যিই কবি সুবীর সরকারের চোখে বিশ্ব- প্রকৃতির রূপদর্শন শুধু আমাকেই নয় বদলিয়ে দিতে পারে সারাবিশ্ব কবি চিন্তার বিচারণ ভুমিকে।
মাত্র কয়েক ঘন্টার সময়ে সুবীর সরকারকে দেখেছি তিনি কোন নির্দিষ্ট জাতিসত্ত্বা কিংবা কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ড লালন করেন না। তার চোখে সারা বিশ্বের রঙ প্রকৃতি এক ও অভিন্ন। তিনি তার যাপিত জীবনে শুধুই কবি, তিনি একজন লেখক। তার সাথে পরিচয় হয় এপার বাংলার কুড়িগ্রাম জেলা শহরে কুড়িগ্রাম সাহিত্যসভার ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘হেমন্তের কবিতা উৎসব-১৪৩০’-এ অতিথি হিসেবে আগমন উপলক্ষ্যে।
আগমনের আগের দিন সুবীর সরকারসহ ওপার বাংলার আমন্ত্রিত আরও দুই কবি, লেখক ও সম্পাদক সৈকত সেন ও দেবাশিষ ভট্টাচার্য এবং এপার বাংলার দুই কবি সাম্য রাইয়ান ও মোকলেছুর রহমানসহ আমরা কুড়িগ্রাম শহরে একত্রিত হই। সেদিনই প্রথম দেখা। মুলতঃ কবি সাম্য রাইয়ানের আমন্ত্রণে কুড়িগ্রামের হেমন্ত উৎসবে এসেছিলেন তাঁরা। কুড়িগ্রামে অবস্থান কালে সুবীর সরকারসহ অতিথি তিনজনকে অনুভব করেছি হৃদয় থেকে। অতিথি তিনজনের মধ্যে সুবীর সরকার ছিলেন একদম অন্যরকম প্রাণোজ্জ্বল, হাস্যজ্জ্বল, সূর্যস্নাত মানুষ। সবসময় তাঁর মুখের হাসিটুকু ছিলো আরও প্রাণবন্ত, আরও আকর্ষিত। তাঁর চোখদুটো ছিলো প্রকৃতিপ্রেমে এক মহাসমারোহ। মনে হয়েছে জাতিগত ভাবে তিনি শুধুই একজন মানুষ। তাঁর সংস্পর্শে যে- কেউ একজন পর্যুদস্ত কবি ও লেখক হতে পারবেন বিশ্বাস রাখি।
পরদিন বিকেলে হেমন্তের কবিতা উৎসবে যোগ দেয়ার আগে সকাল প্রায় ১০ টা থেকে বিকেল অবদি মাত্র ৬/৭ ঘন্টা তাঁর সাথে ঘুরে বেড়িয়েছি অনেকটা পথ। পথে-পথে তাঁর চোখে চিলমারীর বন্দর দেখা, বন্দরে নৌকা দেখা, নদী দেখা, নদীর গতিপথ দেখা, নদীর পানি দেখা, জেগে ওঠা চর দেখা, চরের মানুষের জীবন দেখা আমাকেও আনন্দিত করেছি বেশ কিছুটা সময়, এভাবে দেখতে দেখতে ফেরার পথে চায়ের টঙ দোকানে কিছুক্ষণ সাহিত্য আসরে লোকগান ও পিছিয়ে পড়া মানুষের যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি- কান্নায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার যে উপাখ্যান সেসব দেখে আমাকে মুগ্ধ করেছি আরো বেশি বেশি।
গোধূলির আলো যখন আছড়ে পড়ছিলো ধানক্ষেতে, তখন ধানশীষের গলা জড়িয়ে সেলফিবাজি, এপারের গ্রামবাংলার চিরাচরিত প্রকৃতরূপ মাঠের পর মাঠ, কাঁচা-পাকা সরু রাস্তা, বয়ে চলা নদী, জলাশয়,গরুরগাড়ি, ঘোড়ারগাড়ি কোন কিছুই বাদ যায়নি তাঁর সেলফিবাজির আছড় থেকে।
মাঝে মাঝে সুইচ অফ মুডে আমাকে বলছিলেন, জানেন ভাই, এপার এবং ওপারের মধ্যে কোন অমিল নাই। সবকিছুই এক-অভিন্ন বিভক্ত শুধু কাঁটাতারে।
কবি মানসে সুবীর সরকারের এই অপ্রত্যাশিত ব্যথা নাড়িয়ে দিতে পারে সকল কবি চিত্তকে।
তাইতো কবিকণ্ঠের সম্পাদক অভিমান্য পালের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন- মানুষজনের ভেতর দিয়েই আমার একটা নিজস্ব দেখা তৈরি হয়েছে। মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া গল্প, গহীন জঙ্গলের রহস্য, হাতি বাইসন হরিণ, খড়ম জোতদার, কীর্তনের আসর, পালা গান, পদুমোহন বরাইকের বন্দুক, রাখাল কাকুর মা আর কত কত গ্রাম্য খেলা, গরুর গাড়ির নিচে দুলে ওঠা লণ্ঠনের আলো এই সব দৃশ্যের মধ্যে আমার বাল্য শৈশব অতিবাহিত হয়েছে। বলা যায়, আমি একটি বর্ণময় বাল্যকাল কাটিয়েছি।
আমিও বলি- এমন বালক কবি হবেন না তো হ্যাকার হবেন। হ্যাক করবেন মানুষের জীবন ও প্রকৃতি।
তিনি জীবন ও প্রকৃতি দেখেছেন গরুর গাড়ির নিচে দুলে ওঠা লণ্ঠনের আলোয়। তাঁর চোখে বিশ্ব-প্রকৃতির রূপদর্শন এতোই চমৎকার যে তার গদ্য- পদ্যে উঠে এসেছে প্রাণ ও প্রকৃতির যতসব উপজীব্য আধার। তিনি তাঁর কাব্যিক মননে রচিত করেন- নদীতে ভেসে আসা কাঠের বন্দুক, জল- জঙ্গল, পাখির শিস, খড়মের শব্দ, বাচ্চা ঘোড়ার পিঠে দুরবীন, সবুজ পৃথিবী, সাপের শরীরে ও শিয়রে রাখা আলতো হাত, মাটিতে থাকা পিঁপড়ের ঝাঁকের প্রতি তার অপূর্ব মায়া। লিলুয়া বাতাসে বাঁশির বাজনার মেলবন্ধনে খলনায়কের নৃত্যকেও দেখেছেন তার কবিচিত্তে। তার দৃষ্টি থেকে বাদ যায়নি বাঁশগাছ, চড়ুই পাখির বাসা, ঘুঘুপাখি, ভাদ্রের জলাশয়, কাঁশবন, পাট পঁচার গন্ধ, ধানগাছ, বকনা বাঁছুরের দৌড়ঝাপ, নৌকার মাঝি, মৃত মাছের চোখ, আদিবাসী সংস্কৃতি আর লোকসঙ্গীত সেইসাথে উত্তরের মাটি মানুষ লোকজীবনের ইতিকথা।
সুবীর সরকারের 'গান' কবিতা পাঠ করলেই বুঝা যায়, কবি সুবীর সরকারের চোখে বিশ্ব-প্রকৃতির রূপদর্শন কত চমৎকার। তিনি তাঁর 'গান'-কবিতায় লিখেছেন—
ফেলে আসা সব ভাঙা রাস্তার কথা মনে পড়ে/ পালিয়ে যাওয়া মুরগির পেছনে লাটিম/গ্রাম্য দৃশ্যের ভাঁজে অবিরাম তাঁতকল/যে নদীতে সাঁতার কাটিনি কখনো, সেই নদীর কথা/ শুনি (সংক্ষিপ্ত)।
সুবীর সরকারের এমন আরও অনেক কবিতা আছে যেমন- বন্দুক, বাঁশি, মাতব্বরের হাট, লিলুয়া বাতাস,
বিবৃতি, ম্যাজিক, শিরোনামহীন- কবিতা গুলো পাঠ করে সুবীর সরকারকে আরো বেশি আবিষ্কার করেছি তাঁর বিশ্ব- প্রকৃতির রূপদর্শন দেখে।
কবি সুবীর সরকার একজন সাচ্চা প্রেমিকও বটে। তিনি প্রেম সমন্ধে বলতে গিয়ে বলেছেন- নিজের দিকে তাকিয়ে দেখতে হবে। নিজের ভেতরের প্রেমিকটিকে জাগিয়ে রাখতে হবে অষ্টপ্রহর। এজন্য লিখেছেন— ‘রোগা প্রেমিকের ডায়রি’।
কয়েক ঘন্টার পথচলায় কবি সুবীর সরকারকারকে বোদ্ধা প্রাবন্ধিকের মতো আবিস্কার করা সম্ভব নয়। তাঁর প্রকাশিত বইগুলো পাঠ করার সুযোগ হতো তাহলে সুবীর সরকারের মতো আমিও বলতাম- কবিতা একান্তেই একজন স্রষ্টার ব্যক্তিগত।
আর সেজন্যই হয়ত কোলকাতার কবিকণ্ঠের সম্পাদক অভিমান্য পাল, সুবীর সরকারকে আবিস্কার করলেন তাঁর যাপিত জীবনের রূপ বৈচিত্রে। এজন্য সম্পাদক মহোদয়কে জানাই এপার বাংলার পক্ষ থেকে অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
পরিশেষে কবি সুবীর সরকার তথা আমাদের সুবীরদার সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। সুবীরদা আলো ছড়াক তাঁর বিশ্ব- প্রকৃতির রূপদর্শনে। ভালো থাকবেন সুবীরদা, সুস্থ থাকুন।
20 মন্তব্যসমূহ
যতোটা জীবন চলে যাক পথে—
উত্তরমুছুনঅহেতুক জীবনহীনতায়
ভালো হয় মরে গেলে,
তার থেকে ভালো হয়
ডিয়ার স্বাধীনতা—তোমাকে পেলে!🖤
সেটাই! কবি সাম্য রাইয়ান তেমনটিই মনে করে।
মুছুননিজ সীমান্তের বাইরের ঘটনাবলীতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সময় যথেষ্ট খোঁজ-খবর নেয়া সঙ্গত। একসময় বাংলাদেশে আসামের উলফা/আলফাকে নিয়ে মতামত দেখে বিস্মিত হতাম। অনেকেই এখানে জানতেন না এই সংগঠন আদিতে আপার আাসামে বাংলাভাষী বিদ্বেষে কীভাবে জ্বালানি যুগিয়েছিল। দরিদ্র বাংলাভাষীরা আলফা ও আসু'র জাতিবাদী সেই রাজনীতির শিকার হয়। যার কিছু রেশ এখনও আছে।
উত্তরমুছুনসম্প্রতি মনিপুরে কুকি বিরোধী মইতইদের আন্দোলন নিয়েও সমধর্মী উচ্ছ্বাস দেখে বিস্ময় লাগছে। দিল্লীর বিরুদ্ধে মইতইদের ক্ষোভ যে আদতে কুকি-যো বিরোধী সমীকরণ জাত সে বিষয়ে এখানে খোঁজ-খবর কম। মনিপুরের পটভূমিতে প্রধানত কুকি-যো'রা যে অধস্তনতার বিরুদ্ধে লড়ছে সে বিষয়ে অনেকেই দেখছি উদাসীন!! আপনার মত কবিদের উচিত এবিষয়ে জনসচেতনতা তৈরী করা
ভালো বলেছেন।
মুছুনআহামেমদুল কবিল ভাই, আপনি তো লেখালেখিতে জোশ। কিন্তুক ভারতীয় হিন্দু মালাউনকে নিয়ে কবিতা লিখলেন কেন?
উত্তরমুছুনকবিল ভাই নই। কবির ভাই। আমার লেখায় জোশ পাওয়ায় আপনাকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ। তবে আপনার জিজ্ঞাসার জায়গাটিতে ঘোরতর আপত্তি জানালাম। আমি কোন কবিতা লিখিনি। যা লিখেছি সেটা আমার পরিচিত ভারতের একজন কবিকে নিয়ে তাঁর প্রতি আমার ভালোলাগা ও ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করেছি মাত্র। মনে রাখবেন কবিরা কখনোই ভারত- বাংলাদেশের হয় না, কবিদের নিজস্ব কোন ধর্ম নেই, কবি সবার, সব জাতের। কবি সারা বিশ্বের আয়না স্বরূপ। সুবীরদা তেমনি একজন কবি মানুষ। তাঁর মুখের একটু হাসি দেখলেই আপনারও মন ভরে যেত হয়ত। ভালো থাকবেন আর এটাও মনে রাখবেন মানুষকে ভালো বাসতে গেলে জাত খুঁজতে নেই। ধন্যবাদ!!
মুছুনهذا شعر تافه. وسوف أدخله من خلال مؤخرتك.
উত্তরমুছুনشقيق كودي، سوف أكسر مؤخرتي
মুছুনماذا بدأت يا ابن العاهرة؟
মুছুনاللعنة على والدتك
মুছুনسوف أصفع
মুছুনسوف ركلة لك
মুছুনجمال سوابان
মুছুনশুয়রের বাচ্চা তোরা যে বেজন্মা জারজ সেটা কমেন্ট দেখে বোঝা যায় ৷ আরবি ভাষায় অশ্লীল কমেন্ট করে তোর বাপ মাকে গালির মুখে ফেলিস না ৷ তোদের মতোন কিছু চুৎমারানির কারনে সাম্পদায়ীক দাঙ্গা লাগে ৷ আরবি ভাষায় কমেন্ট করে বুঝাইছিস তুই মুসলমান? শালা মুর্খচোদা তোর কমেন্ট দেখলে বুজা যায় তুই বিধর্মী শালা ধর্ম নিয়ে নোংরামি বন্ধ কর
মুছুনالفتيات العربيات المثيرات وتارا هاجر هنا من أجلكما. من أين حصلت على القصيدة؟ غبي. ماذا كتبت وماذا ترى وتعلق؟ حثالة الأرض مثلك
মুছুনأصل كل الفوضى. اسأل والدتك عما إذا كان لديك أب أعزب أم لا.
المجهول : إلى أمك – بدأت تفعل
মুছুনجميع جيرانك يعرفون أنك تحب والدتك
মুছুনبلا اسم-5
মুছুনلقد ركلت مؤخرتك
تعال وسوف أقبلك
মুছুনআলহামদুলিল্লাহ আহমাদুল্লাহ ভাই। আপনার লেখাটি পড়ে জনাব সুবিরকে চিনলাম। ফোনকল ৫০০ টাকা, ভিডিও কল ১০০০ টাকা। পার মিনিট। কল মি 01911807869
উত্তরমুছুনঅমার্জিত মন্তব্য করে কোনো মন্তব্যকারী আইনী জটিলতায় পড়লে তার দায় সম্পাদকের না৷