এ বেশ কয়েকদিন আগের ঘটনা। এটা ছিল শীতের সময়। আর মাত্র দুই দিন পরে তপনের জন্মদিন।জন্মদিনের আগে, তার বাবা তাকে ডাকল, ডেকে বলল, তোমার তো পরীক্ষার আর এক মাস বাকি আছে আর তোমার স্যার তোমার ব্যাপারে অনেক কমপ্লেইন দিচ্ছে, তুমি কেন ঠিকমতো পড়াশোনা করছো না!
আমি বললাম বাবা…
বাবা বলল " বাবা টাবা কিচ্ছু না এক্ষুনি পড়তে বস"।
তপন মন খারাপ করে পড়তে বসল। দুই দিন পেরিয়ে গেল। আজকে তপনের জন্মদিন। সকাল হতেই বাবা তাকে ডাকলো। ডেকে গালে প্রচণ্ড এক চড় বসালো।
বলল, " তোর মতো গাধা আমি জীবনে দেখিনি। তোর থেকে ভাল একটা গরু পালা, প্রতিদিন একটু দুধ তো দিতো। তোর স্যার আমাকে ফোন দিয়ে তোর ব্যাপারে বিচার দিয়েছে যে তুই পড়াশুনায় একদম অমনোযোগী।"
তপন কান্না করতে করতে নিজের ঘরে চলে গেল। সে সিদ্ধান্ত নিল আর এ বাড়িতে থাকবে না। সে দূরে কোথাও চলে যাবে।
তপন একটা চিঠি লিখল, " বাবা আমি আর এই বাড়িতে থাকব না, আমি যেহেতু খারাপ তোমরা একটা গরুকে এনে পাল। আমি চলে যাচ্ছি - তপন।"
তপন বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। ও জানেনা ও কোথায় যাবে। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেল। ও এক ডালিম গাছের নিচে বসে বসে কাঁদছে। হঠাৎ একটা লোক ওর সামনে এসে বলল, " বাবা নাও খাবার।" তপন ভয় পেয়ে গেল। ও দেখে একটা ছোট মানুষ এসে ওকে খাবার দিচ্ছে। তপন ওকে বলল, " আপনি কে? আপনি জানলেন কিভাবে আমি খাবার খাইনি?"
লোকটি বলল, " তুমি এগুলো বাদ দাও। আগে শোনো, তোমার বাবা তোমাকে পাগলের মত খুঁজছে এবং তোমার মা অজ্ঞান হয়ে গেছে।"
তপন বলল, "আপনি এসব কিভাবে জানেন? আগে আমার এই প্রশ্নের উত্তর দিন"।
লোকটি বলল, "ঠিক আছে আমার নাম ইউ, আমি আসলে মানুষের মনের কথা বুঝতে পারি। তোমাকে এখানে একা বিষন্ন ভাবে বসে থাকতে দেখে আমি তোমার সাহায্য করতে এসেছি।"
তপন বলল, " কিন্তু কিভাবে?"
ইউ বলল আমি যখন ছোট ছিলাম, আমি এক আশ্চার্য ফড়িং এর দেখা পেয়েছিলাম ওটা সাধারণ কোন ফড়িং ছিলনা ওটা আমার কানের পাশে এসে বলল, "আমি তোমাকে মানুষের মনের কথা বোঝার শক্তি দিলাম"। ও আমার কানে একটা ন্যানো চিপ লাগিয়ে দিল এবং সাথে সাথে আমার চোখের সামনে কিছুক্ষণের জন্য ঝাপসা হয়ে গেল। সে থেকে আমার এই অবস্থা।
শোনো তোমার বাবা আসছে, আমাকে যেতে হবে। আবার, দেখা হবে এবার তাহলে আসি।
তপন দেখল একটা লোক হারিকেন নিয়ে এদিকে আসছে। তারপর সামনে তাকিয়ে দেখে ইউ নেই।
বাবা এসে বলল আমার পাগলা ছেলেটা, একটু কি বকা দিলাম আর তুই এই কাণ্ড করে বসলি। চল বাড়ি যাবি, কি অন্ধকারে ঝোপঝাড়ে বসে আছিস।
আমার বাবাটা সারাদিন না খেয়ে আছে । আমি হারিকেনের আলোয় লক্ষ করলাম বাবার দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে।
0 মন্তব্যসমূহ
অমার্জিত মন্তব্য করে কোনো মন্তব্যকারী আইনী জটিলতায় পড়লে তার দায় সম্পাদকের না৷