New

শ্বেতপত্র

তামিম রেজার কবিতা

তোমার আঙুল কি ঈশ্বরের হৃদয়ের মতো বিশাল



গান শুনাও নিঃসঙ্গ নদীর বেদনা পাশে রেখে। প্রকাশিত করো তোমার সমস্তজুড়ে বিরাজ করা বাহারি সুর। কেড়ে নাও সমস্ত মনোযোগ; কেড়ে নাও যৌবন। পৃথিবীর নিকট আমাকে করো চূড়ান্ত উদাসীন। আমার সমস্ত ঘাতক শব্দ বের হয় তোমার উন্মাদ চোখ থেকে। তৃষ্ণার্ত বৃক্ষের ন্যায় আমাকে নিয়ে চলো তোমার প্রতিটি উপশিরায়৷ মস্তিষ্ক ফেটে যাচ্ছে অপ্রকাশিত ব্যথায়; এতো শব্দ তোমার মাঝে! বরং উড়িয়ে দাও বিরহবর্ণ চুলগুলো, মেলে দাও কণ্ঠ, আত্মহত্যাপ্রবণ যাপনের সুর। তৃষ্ণার্ত বৃক্ষের মতো তোমার প্রতিটি উপশিরায় নিয়ে চলো আমাকে। সুগভীর তিলের মতো ভালোবাসো, আমাকে মায়া করো সিগারেটের শেষ টানের মতো।


আমার আঙুল তোমার কাঁধ ছাড়া যায়না আর কোথাও। এইসব তুমিময় তীব্র রাতে বিষন্ন ঘুম পায় তোমার স্মৃতির অভ্যন্তরে। মনে পড়ে সেইসব সন্ধ্যার কথা, যখন তুমি আমার সমস্ত সাথে নিয়ে ফিরে যেতে মৃত্যুমুখি গহীন পাখির মতোন। তোমার কাছেই তো বিক্রি করেছি আমার আত্মা। আমাকে লুকিয়ে রাখো তোমার শাড়ির আঁচলের ভেতর; আমার মুখ-শরীর মুছে দাও তোমার অলৌকিক সুখমাখা আঁচলের প্রতিটি সুতোর স্পর্শে। ঢুকে পড়ি সেই সকল প্রেমের ভেতর– এইসব ছালছাড়ানো মাঝরাতে। আমাকে নাও তোমার ভেতর।


চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করছি তোমার জন্য– আমি ছাড়া যে সময়ের চক্রে তোমার কোনো অস্তিত্ব নেই; তুমি যে কেবল প্রকাশিত হও আমার হৃদয় দ্বারাই। 

আমার হৃদয়ে খোদাই করা আছে তোমার অস্তিত্ব– তুমি কখনো নিঃশেষ হবে না পাপড়ি! তোমার এই ঐস্বর্যের জোরেই– তুমি পোড়াচ্ছো আমার হৃদয়কে। 

তুমি যে প্রাচুর্যের সমুদ্র; আহা– তোমার অস্তিত্বের সাক্ষী হতে পেরে আমার হৃদয় সৌভাগ্যবান। তুমি আমাকে আরও দুঃখ দাও– আর পুড়ে যাওয়া হৃদয় নিয়ে আমি অপেক্ষা করবো তোমার চুম্বনের জন্য। 

আমার এপিটাফে ভাসতে থাকবে তোমার অস্তিত্ব– অনন্তকাল।


তোমার থেকে দূরে থাকাটা যেনো
কবরে একা থাকার মতোই নিঃসঙ্গতা!


কতো লক্ষ্য জন্ম কেঁটে গেছে, তোমাকে পাঠ করিনা! তোমার সমস্তজুড়ে ব্যাবিলনের কারুকার্য। তোমার মতোই নিভৃতে আত্মগোপন করেছে যাবতীয় দুঃখবাদী শিল্প। এবারের বিচ্ছেদে কোথায় আমি আশ্রয় নিবো বলো? তোমার আঙুল কি ঈশ্বরের হৃদয়ের মতো বিশাল? অথচ আমি তোমার রক্তের স্থিরতাই পাইনা! আমাদের প্রেমের উপশিরা যে বিচ্ছেদ ছাড়া রচনা করেনি আর কিছু। একমাত্র ঈশ্বরই এর জন্য দায়ী। চলো, ঈশ্বরের মহাপরিকল্পনাকে পরাজিত করে আমরা ফিরে যাই আমাদের অস্তিত্বে, ফিরে যাই উলঙ্গ অবস্থায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ

  1. কিসমত জাহান টুনিশুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫


    তোমার কবিতা পড়ে
    ঘুমাতে পারিনা সারারাত ধরে

    উত্তরমুছুন
  2. মনোহর জুবায়েরশুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

    পাঠ করলাম,সুন্দর অর্থ ময় কাব্য।

    উত্তরমুছুন
  3. কবিতার সমালোচনা: "তোমার আঙুল কি ঈশ্বরের হৃদয়ের মতো বিশাল"

    এই কবিতাটি একটি গভীর আত্মমগ্ন প্রেম, অস্তিত্ববাদ ও বিচ্ছেদপীড়িত আবেগের সংমিশ্রণ। কবি এখানে প্রেমকে শুধু রোমান্টিক নয়, এক ধরনের আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক অভিজ্ঞতা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

    শৈলী ও ভাষা:

    কবিতাটি অনন্য কাব্যিক গদ্যের ঢঙে রচিত। কবির ভাষা উচ্চারণভঙ্গিমায় দ্রুতিগতিময়, আবেগপ্রবণ ও চিত্রকল্পনাময়। "তোমার আঙুল কি ঈশ্বরের হৃদয়ের মতো বিশাল" — এই শিরোনাম থেকেই এক ধরনের অস্তিত্বের জিজ্ঞাসা ও বিমূর্ত ভালোবাসার আভাস পাওয়া যায়।

    কবিতার প্রতিটি অনুচ্ছেদে (১-৫) রয়েছে এক একটি অনুভবের স্তর — যেখানে প্রেম, যন্ত্রণা, আকাঙ্ক্ষা, পরাভব ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ একে একে পরিস্ফুট হয়েছে।

    চিত্রকল্প ও ভাবনাব্যাপ্তি:

    প্রথম অংশে, কবি নিজেকে তৃষ্ণার্ত বৃক্ষ হিসেবে চিত্রিত করে ভালোবাসার গভীরে ডুবে যেতে চায়। "মস্তিষ্ক ফেটে যাচ্ছে অপ্রকাশিত ব্যথায়" — এই বাক্যটি একাধারে প্রেমের ভার ও মানসিক অবসাদের চিত্র।

    দ্বিতীয় অংশে প্রেমিক/প্রেমিকার শরীর ও স্মৃতি যেন ঈশ্বরতুল্য এক আশ্রয়স্থল। এখানে শারীরিকতা ও আত্মার সংমিশ্রণ ঘটেছে সুচারুভাবে।

    তৃতীয় অংশে চাতকের প্রতীকে চিরন্তন প্রতীক্ষা ও প্রেমিক/প্রেমিকার হৃদয়ের একান্ত মালিকানা প্রকাশ পায়।

    চতুর্থ ও পঞ্চম অংশে বিচ্ছেদের বেদনা, ঈশ্বরের প্রতি একধরনের ক্ষোভ এবং প্রেমকে মহাপরিকল্পনার বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

    দার্শনিক ও আত্মিক উপাদান:

    এই কবিতাটি প্রেমকে এক ধরনের আত্মত্যাগ, নিরবিচ্ছিন্ন যন্ত্রণা ও ঈশ্বরের সৃষ্ট ব্যবস্থার প্রতিস্পর্ধী বলেই মনে করে। "চলো, ঈশ্বরের মহাপরিকল্পনাকে পরাজিত করে আমরা ফিরে যাই আমাদের অস্তিত্বে" — এই বাক্যটি প্রেমকে দার্শনিক বিপ্লব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

    দুর্বলতা:

    যদিও কবিতাটি ভাবনাব্যাপ্তিতে সমৃদ্ধ, তবে কোথাও কোথাও অতিরিক্ত চিত্রকল্পের ব্যবহারে পাঠক বিচ্ছিন্ন অনুভব করতে পারেন। একাধিক চিত্রকল্প একত্রে এসে কিছুটা ক্লান্তিকর হয়ে উঠেছে। তবুও তা কাব্যিক আবহে ভারসাম্য রক্ষা করে।

    উপসংহার: "তোমার আঙুল কি ঈশ্বরের হৃদয়ের মতো বিশাল" একটি উচ্চ মানের অস্তিত্ববাদী প্রেমের কবিতা। এর ভাষা, ভাব ও ব্যঞ্জনা প্রেমের প্রচলিত কাঠামোকে ভেঙে এক নতুন ব্যথাময় সৌন্দর্য নির্মাণ করেছে। কবি প্রেমের মধ্য দিয়ে একধরনের মুক্তি ও ঈশ্বরতুল্য মহিমা অনুসন্ধান করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে আধুনিক বাংলা কাব্যধারায় এক উজ্জ্বল সংযোজন।

    উত্তরমুছুন

অমার্জিত মন্তব্য করে কোনো মন্তব্যকারী আইনী জটিলতায় পড়লে তার দায় সম্পাদকের না৷