১৯৭১-এ মানুষের করুণ পরিস্থিতি / নার্গিস আক্তার

১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ ছিল আমাদের দেশের জন্য একটি কালো রাত। এই দিনে পাকিস্তানি শত্রু সেনা বাংলাদেশকে আক্রমণ করে। গণহত্যা করা ঘরবাড়ি দোকানপাট জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। মা-বোনকে ধর্ষণ নির্যাতন এমনকি মেরে ফেলতে দ্বিধাবোধ করেনি। ১৯৭১ এর পূর্বে আমাদের দেশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। আমরা ছিলাম পরাধীন। যুদ্ধের এই সময়ে কালীন মানুষের বেঁচে থাকা যেন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। এই সময় রাস্তাঘাট নদী-নালা সবকিছু বন্ধ ছিল। কোন যানবাহন চলে নাই। মানুষ পায়ে হেঁটে হেঁটে দূর-দূরান্তে, এমন কি আত্মীয়ের বাড়ি পালিয়ে বেড়িয়েছে।মানুষের কোন স্থিরতা ছিল না । ভয়ে আতঙ্কে মানুষ বাড়ি থাকতে পারত না।। ১৯৭১ এ মানুষ ঘরে বন্দী জীবন কাটিয়েছে। এই সময় মানুষের খাদ্যদ্রব্য থেকে আরম্ভ করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুবই অভাব দেখা দিয়েছিল। যেহেতু বাজার হাট বসতো না ।এমনকি মানুষ দোকান পাট খুলতে পারত না। সবকিছু বন্ধ ছিল। মানুষ ভয়ে আতঙ্কে জীবন নিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছে। মানুষ এই সময় খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে সব কিছুর অভাব অনুভব করেছিল। জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা যেন মানুষের করুণ ইতিহাসের পরিণতি হয়েছিল। ১৯৭১এ মানুষ ঘরে কোন রকম ভর্তা ভাত রান্না করে খেয়ে জীবন ধারণ করেছিল। যুদ্ধকালীন সময় কেরোসিন তেলের অভাবে হেরিকেন জ্বালাতে পারত না। এমনকি অন্ধকারে মানুষকে রাত্রিযাপন করতে হয়েছিল। সাবানের অভাবে মানুষকে কলা গাছের শুকনো পাতা পুড়িয়ে সাই দিয়ে কাপড় সিদ্ধ করে ,কাপড় পরিষ্কার করতে হইত। এমনকি ছাই দিয়ে মাথা পরিষ্কার করতে হইত। দেশের কামার কুমোর কৃষক শ্রমিক ধনী ব্যক্তি ,এমনকি প্রত্যেক পরিবার পালিয়ে বেড়াত। এদের সকলেই এক বেলা পেট পুরে ভাত খেতে পারত না। কোন কিছু কিনার মতো পয়সা মানুষের হাতে ছিল না। যেন একটা দুর্ভিক্ষ আমাদের দেশের অনেক মানুষ ইন্ডিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিল জীবন বাঁচানোর জন্য। অনেক হিন্দু পরিবার ১৯৭১এ মুক্তিযুদ্ধে ইন্ডিয়ায় গিয়ে আর দেশে ফিরে আসেনি।যুদ্ধের সময় গ্রাম শহরের মানুষ সকলে জীবন যুদ্ধ করেছে, শুধু বাঁচিবার তাগিদে। বেশিরভাগ মানুষ দিনে এক বেলা খেতে পারতো আবার অনেককে উপাস থাকতে হতো। গোলাবারুদের গন্ধে দেশের সমস্ত পাখ পাখলি কোথাও কোন দূর অজানা দেশে পাড়ি জমিয়েছে জানা নেই। পৃথিবী যেন নিরব নিস্তব্ধ হয়ে আছে। কোথাও কোন জন প্রাণী দেখা যায় না। শহর গ্রাম সব যেন কালো আঁধারে আস্তরণে আবৃত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষের না ছিল কাজ, না ছিল পেটে ভাত। মানুষ অনেক করুণ অবস্থার মধ্যে ছিল। ১৯৭১এ আমাদের দেশে তেমন কোন যুদ্ধ-সরঞ্জন ছিল না আমাদের মুক্তি সেনারা দা, লাঠি সরকি, বটি, গাছের বাকোল এমনকি ইট পাটকেল নিয়ে যুদ্ধ করেছে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়েছিল। তখন আমাদের দেশের নাম হলো বাংলাদেশ। আর জাতীয় পতাকা লাল সবুজের নিশান। স্বাধীন হলো বাংলাদেশ।