New

শ্বেতপত্র

“এখানকার শ্রমিকরা সংগঠিত, কিন্তু পলিটিক্যালি না” : কমরেড মাহবুবার রহমান মমিন

--------কমরেড মাহবুবার রহমান মমিন

কমরেড মাহবুবার রহমান মমিন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি’র কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি। পার্টিতে যোগ দেয়ার সময়, বর্তমান পরিস্থিতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন শ্বেতপত্রের সঙ্গে। ২০১১ এ সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন শ্বেতপত্র সম্পাদক মোকলেছুর রহমান।  সাক্ষাৎকারটি শ্বেতপত্রের প্রিন্ট সংস্করনে প্রকাশিত৷

শ্বেতপত্র: আপনি কেমন আছেন?

মমিন: আমিতো অসুস্থই। আমি হার্টের রোগী, দুইটা হানড্রেড পার্সেন্ট ব্লক, আমি কথাও বেশি বলতে পারি না, কথা বললে সমস্যা হয়। আমি অসুস্থ প্রায় তিন বছর থেকে।

শ্বেতপত্র: আপনি কোন সময়ে, কিরকম পরিস্থিতিতে পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন?

মমিন: মূলত বাঙলাদেশের স্বাধীনতার পর যখন আমি প্রকাশ্যে ন্যাপ করি ঐসময় এখানে যখন কমিউনিস্ট পার্টি করা হল তখন মনিকৃষ্ণ সেন, শংকর বসু, জিতেন দত্ত, খয়ের ভাই আসতেন; এইসব কমরেড এখানে এসে কমিউনিস্ট পার্টি যখন গড়ে তোলেন তখন ১৯৭৪ সালে সম্ভবত আমি সদস্যপদ লাভ করি। আমাকে হারুন অর রশীদ লাল প্রকাশ্য কমিউনিস্ট পার্টি করার জন্য বলেন কিন্তু আমি পারিনি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ (উনিও কমিউনিস্ট পার্টির লোক ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন ন্যাপের মধ্যে একটা কমিউনিস্ট গ্র“প ছিল যারা প্রকাশ্যে ন্যাপ করতো কিন্তু মূলত কমিউনিস্ট পার্টি করতো) তখন আমাকে বললেন যে কমিউনিস্ট পার্টি করার দরকার নাই তুমি ন্যাপেই থাক, আমিও তো কমিউনিস্ট পার্টি করি, কাজেই তুমি ন্যাপেই থাক, ন্যাপটাকেই ডেভলপ করার চেষ্টা কর। আমাদের কমিউনিস্ট তখন চিত্তদা ছিলো (লালমনিরহাটের, উনিই প্রধান ছিলেন), আমি ছিলাম, চাঁদ উকিল ছিলো, ফিরোজ মুহাম্মদ ফারুক ছিলো, জসিও ছিলো; আমরা সম্ভবত পাঁচজন ছিলাম কুড়িগ্রামে যারা ন্যাপ করতাম অথচ আমরা কমিউনিস্ট পার্টি করি। আর আমাদের বৃহত্তর রংপুর জেলায় ছিলেন মোহাম্মদ আফজাল, উনি প্রকাশ্য ন্যাপ করতেন; এ-ই তখন থেকেই প্রকাশ্যে আমি ন্যাপ করি, ভিতরে ভিতরে কমিউনিস্ট পার্টি করি। এভাবেই কমিউনিস্ট পার্টিতে আসা। কিন্তু এখানকার কমরেডরা চেয়েছিলো আমি প্রকাশ্যে কমিউনিস্ট পার্টি করি, আমি কিন্তু অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের কারনেই (আমাকে খুব স্নেহ করতেন) প্রকাশ্য না করে ন্যাপের মধ্যেই কমিউনিস্ট পার্টির কাজ করি।
(বাম থেকে) মোকলেছুর রহমান, মাহবুবার রহমান মমিন ও সাম্য রাইয়ান

শ্বেতপত্র: কুড়িগ্রাম জেলায় শ্রমিকদের মধ্যে আপনাদের কাজের অবস্থা কিরকম?

মমিন: শ্রমিকদের মধ্যে কাজের বর্তমান অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়, দুই-একজন শ্রমিক আমাদের কমিউনিস্ট সদস্য আছেন। এখানকার মূলত মটর শ্রমিক ইউনিয়নটাই বেশি শক্তিশালী; কিন্তু এরা শক্তিশালী হলেও মূলত আওয়ামীলীগ সমর্থক আবার কেউ বা বিএনপি সমর্থক থাকতে পারে, আছে; বা অন্য দলও থাকতে পারে। কিন্তু মূলত এরা নন পলিটিক্যাল। আমি এদের সাথে অনেকবার কথা বলেছি এবং আনসার (কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক) যেহেতু শ্রমিক সংগঠনে কাজ করেছিলো পার্টির প।ে এখানকার শ্রমিকরা সংগঠিত, কিন্তু পলিটিক্যালি না। আমি মে দিবসে যেমন বলি, শ্রমিক শ্রেণির রাজত্ব কায়েম করতে হবে, শ্রমিকদেরকেই একদিন মতায় যেতে হবে। কাজেই
শ্রমিকদের রাজনীতি শিখতে হবে। আওয়ামীলীগের বর্তমান যে রাজনীতি তা শ্রমিকের পে নয়, গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতন তারা বাড়াচ্ছে না। যারা শ্রমিক আছে তাদের সুযোগ-সুবিধার জন্য কাজ করে না, আওয়ামীলীগ ধনীক শ্রেনির প্রতিনিধিত্ব করে। বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টি সবাই ধনীক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে। কাজেই শ্রমিক শ্রেণিকে এই রাজনীতিটা বুঝতে হবে।

শ্বেতপত্র: পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে আপনাদের কোন কাজ আছে কি?

মমিন: পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে একটু কাজ আছে, আমরা দাঁড় করাবার চেষ্টা করেছি; আমি এবং আনসার অনেকবার বসেছি। ২০০৯ এ আমি হার্ট এটার্ক করার আগেই যতদূর করেছি ঐ পর্যন্ত। আমার অসূস্থের পর আমি ঐভাবে কাজ করতে পারি নাই, আর আনসার একাকী ঐভাবে অগ্রসর হতে পারেনি। এখানে নেতৃত্বের সংকট প্রবল, কেননা যেহেতু বিলোপবাদীরাই শক্তিশালী বেশি এবং সত্যিকথা বলতে কিÑ অন্য কোথায় কি রকম জানি না, কুড়িগ্রামে অন্তত কমিউনিস্ট পার্টি যাতে না দাঁড়ায় তার এহেন চেষ্টা নেই তারা করছে না। যার জন্য এখানে আমরা ঐভাবে আগাইতে পারি নাই।
মোকলেছুর রহমান ও মাহবুবার রহমান মমিন


শ্বেতপত্র: আমরা জানি একটি বিপ্লবী পার্টির জন্য বিপ্লবের স্তর নির্ধারন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বাঙলাদেশের বিপ্লবী পার্টিগুলোর কোনোটা মনে করে তাদের বিপ্লবের স্তর জাতীয় গণতান্ত্রিক, কোনটা মনে করে নয়াগণতান্ত্রিক, এবং কোনটা মনে করে সমাজতান্ত্রিক। এেেত্র সিপিবি’র দৃষ্টিভঙ্গি কী?

মমিন: কংগ্রেসে যেটা পাস হয়েছে, সিপিবি বর্তমানে আমাদের বামপন্থী দলগুলো, যতগুলো দলই আছে একেকজনের মূল্যায়ন একেক রকম। কিন্তু আসল ঘটনা হল সংগঠন। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে না পারলে কাকে দিয়ে বিপ্লব করা হবে? বিপ্লব তো হবে না। আমরা একটা বিপ্লবী পার্টি হতে চাই কিন্তু বিপ্লবের জন্য আমরা কি সবাই প্রস্তুত আছি? আমাদের কি সংগঠন সেই শক্তিশালী আছে? আমরা কমিউনিস্ট পার্টি এখানে বাম ফ্রন্ট একটা করা, একটা বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা করে আসছি; এদেশের দ্বি-দলীয় মেরুকরণের বাইরে একটা তৃতীয় গণতান্ত্রিক বামজোট গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আজকের বাঙলাদেশে আমরা যদি নতুন কথা নিয়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে মানুষের কাছে হাজির হতে পারি তবে জনগনের আমাদের কথা শুনবে। আমরা যেমন বলি ‘লাঙ্গল-পাল্লা-নৌকা-শীষ, সব সাপেরই দাঁতে বিষ, তফাত শুধু উনিশ-বিশ’। কাজেই আমরা গরীবের পরে রাজনীতি যারা করি তারা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, পুঁবিাদে যারা বিশ্বাসী তাদের লেজুরবৃত্তি যদি করি তাহলে বিপ্লবী পার্টিও সেইভাবে গড়ে উঠবে না।

শ্বেতপত্র: সিপিবি’র অনেক সম্পত্তি এনজিও ও ব্যক্তি ভোগদখল করে আছে, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, অনেক অনুষ্ঠানে এই দখলদারদের সাথেই আপনাদের অংশগ্রহন করতে দেখা যায়। বিষটি ব্যখ্যা করবেন কি?

মমিন: কথাটা ঠিকেই, আমরা দখল নিতে পারি নাই। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের অনেকের সাথেই সম্পর্ক ভদ্রভাবে দেখলে হয়ত কথায় যা বলি, সামনা-সামনি দেখা হলে কথা বলি সে যত বড় শত্র“ই হোকÑ এটুকুই। কিন্তু তহরম-মহরম যে অভিযোগটা করতেছো সেটা মনে হয় সেভাবে নাই।

(১১ অক্টোবর ২০১১ খ্রি. তারিখে নেয়া দীর্ঘ সাাতকারের প্রথমাংশ এ সংখ্যায় প্রকাশিত হল। হুবহু প্রকাশ করা গেল না। পরবর্তী সংখ্যায় বাকী অংশ প্রকাশিত হতে পারে। -সম্পাদক)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

5 মন্তব্যসমূহ

  1. লাল ছালাম কমরেট

    উত্তরমুছুন
  2. আপনেরা কার বাল ছিড়ে চলেছেন এত বছর যাবৎ?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ধন্যবাদ রহিম রাজা৷ যথাযথ মন্তব্য লিখেছেন৷ রাজনৈতিক ভন্ডের দল ধ্বংস হোক নিপাত যাক৷ শ্রমিকশ্রেণি মুক্তি পাক! ইনকিলাব জিন্দাবাদ ✊

      মুছুন
  3. লাল লাল লাল সেলাম।
    বিপ্লব চিরজীবী হউক

    উত্তরমুছুন

অমার্জিত মন্তব্য কাম্য নয়