New

শ্বেতপত্র

পাণ্ডুলিপির গল্প ৷ সাঈদ বিলাস: গলি

বরাবর কয়েক মিনিট সামনে হাঁটলে একটা গলি বামদিকে গেছে, আরেকটা গেছে ডান দিকে। বামদিকের গলির মাথায় দেখবি একটা নেড়ি কুত্তা শুয়ে শুয়ে গোঙায়, ওই গলিতে ঢুকবি না। তুই ডান দিকের গলিতে ঢুকবি, ডানদিকের গলিতে ঢুকে একটু সামনে আগাইলে দেখবি আবার বাম ও ডানদিকে দুইটা গলি চলে গেছে, ডানদিকের গলির মাথায় দেখিস একটা ডাস্টবিন পাবি, ডাস্টবিনে একটা মানুষ খাবার খুটে খুটে খাচ্ছে কয়েকটা কুত্তার সাথে, এবার কিন্তু ভুলেও ডানদিকের গলিতে ঢুকবি না, ঢুকবি বামদিকের গলিতে, হাতের বাঁ বরাবর একটা পঁচা ডোবা পাবি, গন্ধে নাড়িভুড়ি উল্টায়া আসবে, তবে টেনশন করিস না! কিছুক্ষণ পর গন্ধ সয়ে যাবে, ভরা পূর্ণিমায় ডোবার পঁচা পানিতে চাঁদের আলোর ঝিলিকে একটা অদ্ভূত ফিলিংস পাবি। আশেপাশে কোথাও কারেন্ট নেই, এখানে যারা থাকে তারা অন্য কোনো জগতের বাসিন্দা, ছোট ছোট অনেক খুপড়ি দেখছিস না ডোবার পাশে কিছুটা দূরত্ব পর পর, এইগুলোতেই থাকে মানুষের মতো কিছু প্রাণী। অধিকাংশই দেখবি মরার মতো ঘুমাইছে। আবার দেখবি কেউ কেউ বদনা নিয়ে বাইর হইছে ডোবায় হাগার জন্য, কান পাতলে দুই একটা ঘরে দেখবি হয় ছেলেটা মেয়েটারে পিডাইতেছে, নাইলে মাইয়াডা ছাওয়ালডারে পিডাইতেছে। স্যরি, আমি আবার এদের ভাষায় কথা বলা শুরু করেছি। তুই তো আবার প্রমিত ভাষা ছাড়া কথা বলিস না। আমি অত পারি না, মাঝে মধ্যে অন্যান্যগুলোও ঢুকে পড়ে। যাইহোক, কান পাতলে কোনো কোনো ঘর থেকে চোদাচুদির স্পষ্ট আওয়াজও পাবি, অবশ্য সেক্স এখানে ডাল ভাতের মতোই সস্তা একটা জিনিস, নতুনত্ব কিছু নাই, আওয়াজ শুনলে মনে হবে খিস্তিখেউড়। একটু আশ্চর্যও হবি, এইসব খুপরিতে এরা থাকেই বা ক্যামনে, আর চোদেই বা ক্যামনে, প্রাইভেসি বলে কিছু নাই! না, নাই! তোর মতো অনেকেরই প্রাইভেসি রক্ষা করতে গিয়ে এদেরকেই প্রাইভেট সম্পত্তি হয়ে যেতে হয়েছে। রাগ করলি নাকি আবার! রাগ করলে আবার যেভাবে এসেছিস, ওইভাবেই ফিরে যেতে পারিস তোর পরিচিত জগতে, যেখানে প্রাইভেসি আছে, স্পেস আছে, স্বাধীনতা নামক অশ্বডিম্ব আছে, আরও অনেক কিছু আছে, যেগুলো তোদেরকে দেবার জন্য এরা নিজেদের জীবনকেই খুপরি বানিয়ে ফেলেছে। যাইহোক তুই এইগুলো বাদ দে, এখনও আগ্রহ থাকলে সোজা আগাইতে থাক। কিছুদূর সামনে আগাইলে দেখবি কয়েকটা শিয়াল আর কয়েকটা শূয়ার কিছু হাড় নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে আর কয়েকটা অলস শুয়ে বসে আছে। হাড়গুলো মরা মানুষের। এখানে যত মানুষ মারা যায় সবগুলারে কবর দেবার জায়গা নাই তো। তাই লাশ ফেলা হয় ভাগাড়ে, ওই ভাগাড় থেকেই হাড় খুঁজে নিয়ে আসে এই শিয়াল ও শুয়ারেরা। কাছাকাছি গেলে সবগুলো শিয়াল ও শূয়ার একসাথে সটান হয়ে সতর্ক দৃষ্টিতে তোর দিকে তাকাবে, ভয় পাস না, কিছু করবে না। ওরা শুধু মরা মানুষের হাড় মাংসই খায়, ওরা জানেই আজ হোক কাল হোক তোর মতো মানুষের লাশ এখানে আসবেই। আর একবার মৃত মানুষের মাংসের স্বাদ পেয়ে গেলে জ্যান্ত মানুষ কে খাইতে চায়! মরা মানুষের মাংসের চেয়ে মজাদার খাবার দুনিয়াতে আর নাই। তুই চুপচাপ সোজা আগাইবি, কিছুটা এগুলে দেখবি শিয়ালগুলো একসাথে ডাকা শুরু করবে, খেয়াল করে দেখবি তোর কাছে সেটা একসাথে অসংখ্য বিদ্রুপের শব্দের সমন্বিত একটা ক্যাওয়াজ মনে হচ্ছে। চমকেও যাইতে পারিস।
অনেকদূর চলে এসেছিস, তাইতো। কিছুটা ফাঁকা জায়গা আছে, একটু হাওয়া গায়ে লাগবে। চাইলে ঘাসে কিছুক্ষণ বসে জিরাইতে পারিস। কিন্তু বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারবি না, কিছুক্ষণ পরেই দেখবি নাকে এসে লাগবে জগতের সবচেয়ে প্রাচীন গন্ধটা, ভদ্রলোকের মলের সুবাসিত গন্ধে আর টিকতে পারছিস না! তাইতো! একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখবি সামনে রাস্তার দুইপাশে দুইটা বড় মলের নর্দমা বয়ে গেছে, সেই নর্দমার ওপর খুঁটি গেড়ে একটার গায়ের সাথে লাগানো আরেকটা ঝুঁপড়ি, এইসব শত শত ঝুঁপড়িতে মানুষ নামক কিছু জন্তু থাকে, যারা তোদের মতো গান গায়, আনন্দ করে, দুঃখে কাতর হয়, সুস্থ থাকে, অসুস্থ থাকে, ভালোবাসে, ব্যথা পায়, হাগে, মোতে, চুদে, আর খায়। এভাবে কিলোমিটারখানেক হাঁটতে থাক, হাঁটার পর এবার তিন রাস্তার একটা মাথা পাবি। এই রাস্তার মাথাগুলো আবার শুরু হইছে কোনো না কোনো গলি থেকে। যেকোনো গলি ধইরে হাঁটতে থাক, হাঁটতে হাঁটতে যখন দেখবি বাতাস কেমন ভারী ভারী ঠ্যাকে, তখন বুঝবি কাছাকাছি চলে এসেছিস। এবার শুধু নাক বরাবর একটু সামনে যা, তারপর হাতের বামে মোর নিয়ে, আবার ডানে যা, ডান থেকে আবার বামে, বাম থেকে ডানে, তারপর ডান থেকে ডান হয়ে বামে গিয়ে সোজা দাঁড়া। কী দেখছিস! একটা পাহাড়ের মতোন স্তূপ দেখছিস তো! হ্যাঁ, এইটা হচ্ছে এই শহরের সবচেয়ে বড় ময়লার ভাগাড়। তোদের সভ্যতার ময়লার পাহাড়। তোদের সফলতা! পাহাড়ের বামে একটা সিঁড়ি আছে, দশ পনের ধাপ উপরে উঠে তাকা। কী দেখছিস? চোখের সামনে যে সব পোকামাকড়ের মতো বস্তু দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছিস, ওইগুলোই হইলো এই বস্তির খুঁপড়ি নামক ঘর, জানতে চাইছিলি তো কোথায় থাকি!  এইগুলোর কোনো একটা বেছে নে, সেটাতেই আমি বা আমরা থাকি! তার উল্টো পাশেই যে আলো ঝলমলে বিশাল বড় অট্টালিকা দেখছিস ওইটাতে তুই বা তোরা থাকিস! এইবার চিনেছিস আমায়? আমি হইলাম তোগো সভ্যতার আবর্জনা আর তুই হইলি তার মণিমুক্তা! এইবার যে কোনো একটা গলি ধরে এগিয়ে যা, দেখি তোর আলোর সভ্যতায় যাইতে কত সময় লাগে? পারবি তো এই গলি ঠেলে বের হইতে?

………………………………………………………………
প্রকাশকঃ উৎস পাবলিশার্স 
বইঃ ৬ ফর্মা
লেখকের গল্পের প্রথম বই। 
এই মাসেই প্রকাশিত হচ্ছে।
বই পাওয়া যাবে কনকর্ডে জাগতিক প্রকাশনীর দোকানে, আজিজে প্যাপিরাসে, বাংলাবাজারে উৎস পাবলিশার্স এর দোকানে, রকমারিতে অথবা লেখকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ