বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে "হাংরি আন্দোলন" এক বিশেষ সাহিত্য দর্শন বলে স্বীকৃত। এই মত অনুযায়ী মানুষের জীবনের প্রাত্যাহিক প্রতিচ্ছবি বাংলা সাহিত্য আর ধারণ করতে পারছে না। সামাজিক মানুষের দগদগে রূপ প্রকাশে প্রচলিত সাহিত্যধারা অক্ষম। যে সাহিত্যকর্মগুলো প্রকাশিত হচ্ছে তা যেন শুধু চর্বিতচর্বনে পর্যবসিত। এই বিকট বাস্তবতায় হাংরি সাহিত্য আন্দোলনের দর্শন কোন কপট আচ্ছাদনে বিশ্বাস করে না। যা নিরাভরণ, তাকে আড়াল করা সত্যের অপলাপ মাত্র। ফলে হাংরি লেখকগণ বাংলা সাহিত্যের প্রচলিত রূপতত্ত্বের বিরোধীতা করেছে, জন্ম দিয়েছে এক নতুন সাহিত্যশৈলীর। ষাটের দশকে ঘটে যাওয়া এই আন্দোলন বাংলা সাহিত্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
সমীর রায়চৌধুরী, শৈলেশ্বর ঘোষ, মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বাসুদেব দাশগুপ্ত, দেবী রায় প্রমুখের হাতে জন্ম নেয়া এই নতুন সাহিত্যচিন্তা বাংলা সাহিত্যজগতে আলোড়ন তোলে। লেখক পাঠক সচকিত হয়ে নিজেদের প্রথারুদ্ধ চিন্তা নিয়ে বিমূঢ় হয়ে পড়ে। আইন আদালতের ভয় দেখিয়ে এই প্রবল তরঙ্গমালা রুখে দেয়া যায়নি। বাংলা সাহিত্যের উদার ভূমি হাংরির চেতনাকে আশ্লেষে গ্রহণ করেছে। উপমা-অলংকার, প্রাসঙ্গিক বিষয়, শব্দ ও বাক্যসজ্জারীতি, উপস্থাপনা ভঙ্গি অর্থাৎ সাহিত্যরূপের স্তরে স্তরে হাংরি চেতনা এক অমোচনীয় ছাপ রেখে গেছে। আগামী দিনে এর রূপময়তা আরও স্পষ্ট হবে।
মাইকেল মধুসূদনের হাতে বাংলাসাহিত্যের ক্ষীণ স্রোতধারায় যেরূপ নব কল্লোলের জোয়ার এসেছিল। ষাটের দশকের এই আন্দোলন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসেও তেমন এক নতুন গতিধারার জন্ম দিয়েছিল। এই নবযুগের ফসল সোনায় মোড়ানো ছিল না। সে যুগের কবিগণের মর্মভাষা, কাব্যভাষা ভিন্নরকম। নিরাভরণ জীবনের অভিব্যক্তি নিরালংকার হবে সেটাই তো স্বাভাবিক। তবে ব্যক্তি মানুষের ক্লিষ্ট স্বরূপ শিল্পের ছোঁয়ায় রঙিন হয়েছিল- সেটাই ছিল এই সাহিত্যদর্শনের বড় প্রাপ্তি। আইন, সামাজিকতা, নৈতিকতার উৎপীড়নে যখন মানবিকতা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছিল, ঠিক তখন নতুন সাহিত্যের আবাহনী সঙ্গীত গেয়েছিল কয়েকটি তপ্ত প্রাণ। সাড়া পড়ে গিয়েছিল দিগ্বিদিক। কবিতার নামকরণ, অপ্রচলিত উপমা-রূপকের যথেচ্ছ ব্যবহার, বাক্যসজ্জার অভিনবত্ব, বক্তব্য উপস্থাপনের ঋজুতা, রূঢ়তা- সবমিলে বাংলা সাহিত্যের শরীর শিহরিত হয়ে উঠেছিল। আইন-আদালত, নৈতিকতা, শালীনতা, প্রথা কোন কিছুর পরোয়া না করে সে সাহিত্যধারা রেখে গেছে এক অমলিন ছাপ। বাংলা সাহিত্যের এই অভিনব সময়চেতনার নাম 'হাংরি আন্দোলন'।
পরবর্তীকালের বাংলা সাহিত্যের মননশীল ধারার সাহিত্যিকগণ এর অপার্থিব প্রভাবকে এড়াতে পারেননি। অনিবার্যভাবে রচনার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিয়ে যায় হাংরি সাহিত্য দর্শন। হাংরি মরেনি, প্রত্যাখ্যাত হয়নি। বরং নতুন সময়ের চিন্তাশীল আবেগপ্রেমী লেখক হাংরিকে গ্রহণ করেছেন, অবলীলায় রচনা করেন হাংরির কাজলচিহ্ন।
পরবর্তী যুগে শম্ভু রক্ষিত, অরুণেশ ঘোষ প্রমুখের হাত ধরে হাংরি সাহিত্য আন্দোলনের ভাবনা বাংলা সাহিত্যের শরীরে স্পষ্ট ছাপ তৈরি করেছে। এর অনিবার্য বাস্তবতা এতটাই প্রকট যে নতুন সহস্রাব্দের নতুন ধারার লেখকদের রচনাতেও নতুন রূপতত্ত্বের চিহ্ন বারংবার ফুটে উঠছে। আসলে পরিবর্তিত সময়কালের জীবনযন্ত্রণা সাহিত্যের শরীরে জেগে উঠবেই। আড়াল করতে চাইলেও তা সম্ভব নয়। পল্লীর আরণ্যক দিগন্তকে ছাপিয়ে নিষ্প্রাণ নাগরিক অবয়ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এটাই সময়ের নখরাঘাত, মহাকালের ভবিতব্য। এই তাড়িত সময়ে বাস করে একজন কবি নিজের রক্তরেখাকে কতটুকুই বা আড়াল করতে পারে। আর একে উপযুক্ত ব্যঞ্জনা দিয়ে প্রকাশযোগ্য করতে পারে একমাত্র হাংরি দর্শনের স্বরশৈলী। হাংরি আন্দোলন এখানেই সার্থক, এখানেই সফল, অমর।
10 মন্তব্যসমূহ
বাংলা সাহিত্যের এমন মিস্টি ধারার কবিতা গল্প আমাকে এতদিন পড়াওনি কেন ওগো সম্পাদক৷ তুমি খুব দুস্টু৷
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনতোমাকেও চুমু
মুছুনলেখককে শুভেচ্ছা
মুছুনসম্পাদককে চুমু 😘😘
লেখককে শুভেচ্ছা
মুছুনসম্পাদককে চুমু 😘😘
কিসমত জাহান টুনি আপনার মাথা খারাপ হলো না কী?
মুছুনতুমি কষ্ট পাইও না ওগো সম্পাদক,,, তোমার চুমু ভুল বশতো অন্যের কমেন্টে পোস্ট হয়ে গেছে,,,আসলে তোমাকেই আসল চুমু,,,,তুমি ত জানোই 😘😘
মুছুনআমার কবিতার মতো মহান ধারা বাংলা সাহিত্যে আছে জেনে খুশি হলাম৷ ভালো প্রবন্ধ প্রকাশ করেছো হে৷ তোমাকে ধন্যবাদ৷
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনকমেন্ট ডিলেট করা নিয়ে আপনারা যারা শ্বেতপত্রের উপর ক্ষুব্ধ, রাগান্বিত, যারা শ্বেতপত্র বয়কট করেছেন, আপনারা চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটে এসে মনের মতো কমেন্ট করতে পারবেন৷ আপনার মনের কথাটি আমাদের সাইটে লিখুন৷ যত খুশি তত কমেন্ট করুন৷
উত্তরমুছুনআমাদের ঠিকানা: www.pankty.com
আমরা কমেন্ট ডিলেট করি না৷ আমরা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী৷ পংক্তি পত্রিকা৷
অমার্জিত মন্তব্য করে কোনো মন্তব্যকারী আইনী জটিলতায় পড়লে তার দায় সম্পাদকের না৷