New

শ্বেতপত্র

যেভাবে লেখা হলো রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ




লেখক: সুদেব চক্রবর্তী

ঈদ, বিশেষত ঈদুল ফিতর এলেই একটি গান সর্বত্র বাজে। গানটা হলো- 'রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ'। গানটির জনপ্রিয়তা সেই শুরু থেকে আজও টিকে আছে। এই গানটা নিয়েই কথা বলা যাক। 

সময়টা ১৯৩১ সাল। বাঙালি মুসলমানের কাছে কাজী নজরুল ইসলাম তখন একজন 'কাফের'। এমনকি শিক্ষিত মুসলমানরাও তাকে 'কাফের' বলতো। এতে মনোকষ্টে ভুগতেন শিল্পী আব্বাসউদ্দীন। তিনি একদিন নজরুলকে বললেন, 'কাজী দা, আপনি দুটো ইসলামী গান লিখুন নাহ! আমি গেয়ে দেবো। দেখবেন সবার ধারণা পাল্টে যাবে'। 
নজরুল এ কথায় রাজী হলেন বটে, কিন্তু বলে দিলেন যদি ভগবতী বাবু রাজী হয় তবে গান লিখবেন। 
ভগবতী বাবু, মানে ভগবতী ভট্টাচার্য, এইচএমভি রেকর্ডিংস-এর ইনচার্জ।  এই লোকটির ভূমিকা চিরদিন স্মর্তব্য। তো, আব্বাসউদ্দিন গেলেন ভগবতী বাবুর কাছে। ভগবতী বাবু শিল্পবোধ সম্পন্ন এবং সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন। কিন্তু সমস্যা হলো, তখনকার কোলকাতায় রক্ষণশীল হিন্দু সমাজে শ্যামা সঙ্গীত, ভজন এসবের রমরমা বাজার। আবার ইসলামে গান হারাম,  মুসলিম সমাজেও সঙ্গীত নিষিদ্ধ। ফলে ভগবতী বাবু বিষয়টাকে অসম্ভব বলে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। 

কিন্তু তখন নজরুলের গান যেমন সমাদৃত, তেমনি কোচবিহারের উদীয়মান তরুন শিল্পী আব্বাসউদ্দিনও মোটামুটি জনপ্রিয়। ফলে ভগবতী বাবু ঝুঁকিটা নিলেন। সেই প্রেক্ষিতে নজরুল লিখলেন 'রমজানের ওই রোজার শেষে' গানটা। সাথে আরও একটি গান। সুর করে তুলে দিলেন আব্বাসউদ্দিনের কণ্ঠে।

এরপর সে কী কাণ্ড। কোলকাতার অলিতে গলিতে ছড়িয়ে পড়লো এই গান। মানুষ মুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগলো আর ভাবছিলো ইসলামিক গানও এত সুন্দর হতে পারে!

এইচএমভি কোম্পানি দ্বিগুন মুনাফা অর্জন করতে লাগলো। ভগবতী বাবু নজরুলকে আরও ইসলামিক গান লিখতে উৎসাহ দিলেন। কবি গোলাম মোস্তফা, কবি জসীমউদ্দীনও এগিয়ে এলেন। কিন্তু ইসলামিক গান গাওয়ার এত শিল্পী কোথায়? বিশেষত মুসলিম ঘরে। ফলে অনেক হিন্দু শিল্পীরা মুসলমান নাম নিয়ে গান গাইতে লাগলেন। যেমন: ধীরেন দাস-গনি মিয়া নামে, চিত্ত রায়- দেলোয়ার হোসেন নামে, আশ্চর্যময়ী দাসী- আমিনা বেগম নামে, গিরীন চক্রবর্তী- সোনা মিয়া নামে প্রমূখ। 

আর এভাবেই শুরু হলো ইসলামিক গানের নতুন যাত্রা। যার শুরুর ক্রেডিট ওই তিনজনের- কাজী নজরুল ইসলাম, আব্বাসউদ্দিন এবং ভগবতী ভট্টাচার্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ