New

শ্বেতপত্র

দেবাশিস সাহার কবিতা



ইশারা 


চোখ থেকে 

একা একা উড়ে যাচ্ছে ইশারা 

ইশারা একটি চিঠি 

অবচেতনে তোমাকে চিঠি বলে ডাকি

কথার ডগায় আঠালো মেঘ

ভয়ের বায়বীয় বেড়া

ছুঁয়ে দিলে সব উড়ে যায়

চাঁদ রঙের চরিত্র তোমার 

ঝড় লাগলেই দোদুল্যমান ডুবো পাহাড় 

ভেঙে যায় নথ

না- বলা কথাগুলো দিয়ে সারাদিন ইশারা বানাও

তোমার সমুদ্রে 

না-লেখা অভিমান ভিজে যায় 

ডুবে যায় নোঙর 

ইশারা নিয়ে এগিয়ে যায় নদী 



অপ্রকাশিত দেবাশিস 


অচেনা নদী 

একা একা ভেসে যাচ্ছে অপ্রকাশিত দেবাশিস 


কঙ্কালে লেগে আছে মৃত প্রেমিকার স্পর্শ 

মনের ছোঁয়া পেয়ে

ক্রমশ প্রকাশিত হতে থাকে মরুবালকের ডায়েরি 

অক্ষরগুলো হয়ে যায় সীমান্তবর্তী! 





 চন্দ্রপৃষ্ঠ ও কলঙ্ককথা 


চাঁদে তোমার আলতা মাখা পায়ের ছাপ

আলতা ও সিঁদুর খেলা কি

মহাকাশে মানায়

কানাই এখানে বাদাম ফেরি করে

তুমি তো এখন চন্দ্রকলা

তোমার বিন্দি জ্বলে 

আমরা চাঁদ বলি

জোছনা এসে সরিয়ে দেয় আড়াল 

মেতে উঠি মাতনে

তুমি চন্দ্রবিন্দু পাঠাও

আমি পৌঁছে যাবো

 তোমার কলঙ্ক মাখা কপালে। 




শস্যগোলা
 

মা রঙের মেয়ের কাছে

জন্ম থেকেই শস্যগোলা 

বয়স বাড়তে থাকলেই

ঘড়া পূর্ণ হতে থাকে শিশুখাদ্যে

বাবা রঙের ছেলের কাছে থাকে 

সেই শস্যগোলা খোলার চাবিকাঠি 

ছেলে রঙের বাবা মন পাঠায়

মেয়ে রঙের মায়ের কাছে

জোছনায় ভেজা মন

পাহাড় সমুদ্র পেরিয়ে পৌঁছে যায়

সেই শস্যগোলার কাছে

আড়ালে হেসে ওঠে ঈশ্বর...... 




প্রশ্ন করো রাষ্ট্রের কাছে 

(কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মরণে)  


কবি আজ গাছের ছদ্মবেশে 

আমাদের চারপাশে 

শিঁড়দাড়া উঁচিয়ে 

তর্জনী তাক করে বলে

প্রশ্ন করো

প্রশ্ন করো  রাষ্ট্রের কাছে 

প্রশ্ন  রাখো  তাদের কাছে 

যারা তোমার কেড়ে নিয়েছে অধিকার 

য্যারা ভুখা রেখেছে তোমার দেশকে

প্রতিটি প্রশ্নে গলা মেলাও

শয়্যা পাতো জল ও আগুনে

অপমানেও ভালো থেকো

প্রশ্ন ছুঁড়ে মারো

সেইসব  শীততাপনিয়ন্ত্রক ইমারতের কাছে

যারা তোমার মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়

যারা তোমাদের বেঁধে রাখে অপশাসনের শৃংখলে

ধর্ম নিয়ে যারা সওদা করে

প্রশ্ন রাখো তাদেরও কাছে

হে তরুন

হাজার  হাজার কবিতার লাইন না লিখে 

বীজ পোঁতো

বীজের মুখে ঠুসে দাও হাজার রঙের প্রশ্ন

সেও একদিন গাছ হয়ে 

প্রশ্ন করবে রাষ্ট্রের কাছে 





কয়লা রঙের কৃষ্ণকলি 


আয়রে আমার কয়লা

আমার কৃষ্ণকলি 

দু:খ পুড়িয়ে পুড়িয়ে 

ফু দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া জীবনের মালকিন 

আয়রে আমার ধুয়ে যাওয়া রূপবতী নদী 

প্রকৃতির খেয়াল ক্যামেরা বন্দীর কারিগর 

আয় 

ছুটে ছুটে আয়

চঞ্চলা হরিণী হয়ে আয়

কষ্টগুলো কাগজের নৌকা করে 

ভাসিয়ে দে দু:খের সাগরে 

হাসির তুফান উড়িয়ে আয়

মেঘের বারান্দায় যাবতীয় স্মৃতি রেখে আয়

এক মুঠো দুনিয়ায় চড়ুই পাখির জীবন 

গান দিয়ে এঁকে রাখ সময়

ভালোবাসার মানুষগুলোকে 

রাঙিয়ে দে আনন্দের তুলি দিয়ে

তোর হাসি নিয়ে ঘুমাতে যাক সূর্যাস্ত 

তোর স্বপ্ন দিয়ে খোলা হোক পৃথিবীর সমস্ত জানালা

তোর প্রেমে অন্ধ ফিরে পাক দৃষ্টি 

তোর উদার বৃষ্টিতে ভিজে যাক

ফুটপাতের উদোম চাঁদ 

আয়রে আমার প্রেরণা 

আমার আগামী দিনের সকাল

কয়লা হয়ে মেতে ওঠ সৃষ্টিতে

কৃষ্ণকলি হয়ে  রঙিন কর সবার স্বপ্ন

আয়৷ আয় আয়

আয়রে আমার কৃষ্ণকলি রঙের কয়লা।




 জীবনলিপি  


তুমি তো মাটি

প্রতি রাতে বীজ রেখে আসি

সারাদিন  লিখে রাখি জীবনলিপি

জীবনলিপির ব্যথার হরেক রঙ


আরো লিখে রাখি প্রত্যাশার তুমুলতা



তুমি তো বেহিসেবী জমি

আমি বর্গাদার 

ফসলের উদ্দামতায়

ওলোট - পালোট করি মাটির অন্তর

জীবনলিপি  রাখি মাটির গভীরে

লিপি উদ্ধারে আজও ব্যস্ত মহাকাল। 





অভিমান 
 


আর কত অভিমান সরাবো গোঁসাই  


অভিমান সরাতে সরাতে

এসে গেছি অনেক পথ

পুরো অভিমান এখনো সরেনি

তলানিতে জমে আছে অনেকখানি পলি

পলি সরিয়ে দেখি

ভালোবাসা নেই 

শুধু একখানা ভালোবাসার কঙ্কাল 

সেখানেও কলঙ্কের শ্যাওলা 

অভিমানে সবুজ 





পুলিশকাকু


পুলিশ কখনো বন্ধু হতে পারেনি মানু

তুমিই তো চেয়েছিলে 

পুলিশকাকুই হবে তোমার উদ্ধারকর্তা


রাত যখন ভয় রঙের অন্ধকার 

হিংসা যখন রক্তের  অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায় 

এক গলা বিপদে দাঁড়িয়ে 

ইষ্টদেবতা ভেবে তোমাকেই জপেছি পুলিশকাকু

তুমিই তো আমার  আমাদের ঈশ্বর 

বচ্চন হয়ে বিপদের কালাপানি থেকে 

আমাদের নিয়ে যাবে ভোরের দিকে......




মিসম্যাচ


চারপাশে অজস্র ভালো তালা

নানা রঙের চাবি ঘুরে বেড়ায় আহ্নিক গতিতে

সম্পর্কে পুরু মরিচা

কার দোষ 

দোষ ধরার কারণে 

চাবি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে 

তালাও হচ্ছে বিমুখ 

অথচ সব তালা ও চাবি নতুন এবং ভালো 

শুধু মিসম্যাচের কারণে 

সম্পর্কে দূরত্ব।




শরীর 


শরীর লেখো পুরুষ 

শরীরে রেখো আলো রঙের আদর

রেখো অগ্নিকুণ্ড 

মরণঝাঁপে জুড়াবো মন

আদর রঙের আলোয় ভেসে যাবে ব্যস্ত সময় 

আলো দেখে দেখে

পথ চিনে চলে আসবে ভোর 


শরীর আঁকো পুরুষ 

শরীরে আঁকো শান্তি 

নিরিবিলি পেয়ে চাঁদ এসে ঘুমাবে

আমাদের শান্ত চরাচরে। 




দাগ 


আকাশে আড়াআড়ি লাল দাগ

পুড়িয়ে দিচ্ছে চোখ 

বড়ো বড়ো ড্রাম আর ভাঙা ট্রামে

ভর্তি করা হচ্ছে রাত

আগামী দিনের জন্য 


সাদা খাতা পেয়ে গতি বাড়াচ্ছে ঘোড়া 


তলপেটের ভাড়াটিয়া দাগ সরাতে

দেখতে গেছে সূর্যাস্ত 


অপ্রকাশিত আওয়াজের গন্ধ পেয়ে

ফিরে আসছে হারিয়ে যাওয়া পাখিদের প্রেমিক 


ভয় পেয়ে বাসা বদল করছে ভাষা

কুয়ো জীবনে অস্ত যাচ্ছে বয়স 

মন সারানোর ছলে।





ছায়া 


রাস্তায় শুয়ে আছে ছায়া

আমার চলাচলে ছায়া চঞ্চল 

পতিতালয়ে সূর্যোদয় হয়না

অন্ধকারের গন্ধে পাশ ফেরে তারিখ 

শহরের শেষ ট্রেন চলে গেলে 

বাবুমশাই মৃত ছায়ার পাশে

দেহ রাখে

সারারাত খোলা থাকে শরীর 

মন্দির থেকে গড়িয়ে আসা নদীতে স্নান করে ঘরে ফেরে এক-একটা ব্যবসা 

আলো নিভে গেলেও জেগে থাকে খিদে 

ব্যথা নিয়ে কথা নিয়ে 

চলন্ত ছায়া এগিয়ে দেয় জীবন। 




বোতাম 


গোপন পাহারা দেয় বোতাম 

দেহরক্ষীর ভূমিকায়

কেটে গেছে ইহকাল 

পরকালেও বোতাম সেলাইয়ের বিকল্প


খাবারের চারপাশ ঘিরে থাকে

বোতামের আত্মীয় - স্বজন 

হুক শিল্প থাকে বোতামদের পাড়ায়


হুক জেগে গেলে 

শুরু হয় বোতাম বিপ্লব 


বোতাম খুললেই 

আবিষ্কার হয় অন্য এক দেশ।



 বসুন্ধরা আবাসন  


গাছকে বলেছি

অসুখ ভালো হলে

এ পৃথিবী গাছেদের হবে 

পৃথিবীর প্রতিটি গ্রাম - শহরের মোড়ে মোড়ে

রাজত্ব করবে এক - একটি গাছ

গাছেরা ভীষণ বিশ্বস্ত  কথা রাখে

অসুখ ভালো হয়ে যাবার পর

জলাভূমি মেরে গাছ কেটে 

বানালাম বসুন্ধরা আবাসন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. কবি লিখেছেন বেশ৷ তাকে মাথা ঝাকানো স্যালুট জানাই৷ কিন্তু খুব একটা আকর্ষনীয় লাগল না৷ মনে হয় কবিতাদেবী কবির বাহুডোরে ধরা দিচ্ছে না৷ যাহোক কবি ও সম্পাদক উভয়কে অভিনন্দন৷

    উত্তরমুছুন

অমার্জিত মন্তব্য কাম্য নয়