সারাদিন যখন সূর্যদেবের তাপের প্রলেপে অতিষ্ট লাগছিলো, ঠিক তখনই আকাশের শেষপ্রান্ত থেকে ধূসর-কালো মেঘের সারি উড়ে এসে জুড়ে বসতে লাগলো সুডোকু পাজলের মতন করে।
আমার রুম থেকে অবশ্য আকাশটা তেমন একটা দেখা যায় না। কিন্তু আমি চাই। হ্যাঁ, খুব করে চাই আকাশ দেখে বারবার বিস্মিত হতে আর ইন্দ্রজালের মোহে থেমে যেতে। বাড়ির সামনে নারকেল গাছটি তি্রতি্র করে কাঁপছে, হাওয়ার আবেশে শরীরের দুলুনি বাড়তে বাড়তে যেন মৃদুমন্দ নাঁচতে লেগেছে ও।
আমি বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকি, বৃষ্টি দেখলে কি কেবল আমারই খুব আনন্দ হয়?
নাহ্! বৃষ্টি শুধু আমার একার নয়। তবে কেন এত আমার করে পেতে মন চায় এই বরষাকে?
কিছু মুহুর্ত্য বাদেই অপার্থিব এক গন্ধে শহরটা ছেঁয়ে যেতে থাকে।
এই যে। হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি। তুমিও কি টের পাচ্ছ গন্ধটা?
এটা কিন্তু আমারই প্রিয় শহর— ঢাকার ঘ্রাণ।
এই জল-হাওয়া, ভেজা মাটির সোঁদা ঘ্রাণ। দিন মজুরের গায়ের, রিক্সাওয়ালার ঘামে ভেজা শার্টের, বস্তিবাসীদের হাহাকারের, ধানমন্ডি লেকের জলের, ফেরিওয়ালাদের অক্লান্ত হাঁকের, সদ্য নতুন রঙ করা বাড়ির দেয়ালের, কিংবা ধরো ন্যাপথালিনের, অথবা নেইলপলিশ রিমুভারের মাতাল ঘ্রাণ। রবিন্দ্রসরোবরে সন্ধেবেলায় হেঁড়ে গলায় গান গাইতে থাকা যুবকদের, সদ্য আলতা পায়ে দিয়ে রোকেয়া হল থেকে বের হওয়া যুবতীদের, ধানমন্ডির শৌখিন অলি-গলিতে লুকিয়ে থাকা মাধবীলতার ঝাড়ের, হাজারীবাগের পথে বসে থাকা এক বৃদ্ধের করুন ঘ্রাণ। এইসব— সবকিছু, সবার গন্ধ মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
ওই তো, দূরে একটা আমগাছের মাথায় লাল রঙের একটা পতাকা আটকে আছে। তার ঠিক ওপর দিয়েই একটা কাক, পতাকাটার দিকে চেয়ে চেয়ে উড়ে যাচ্ছে কোনো অজানা গন্তব্যে! আরেহ্ বাবা, উড়ছিস যখন একটু দেখে উড়বি তো! একটু দূরেই ল্যাম্পপোস্টর সাথে ধাক্কা খাবো খাবো করে, নিজেকে সামলে নিলো পরমুহূর্তেই। কিছুটা আস্বস্ত হয়ে, খিলখিল করে হেঁসে উঠলাম আমি। আচ্ছা, ও এতো দূর থেকে আমার হাসিটা শুনলো কী করে? আমার দিকে ভীষণ রাগী রাগী চোখে কটমট করে তাঁকিয়ে উড়তে উড়তে আমার চোখ থেকে অদৃশ্য হলো মেঘলা আকাশে।
ততক্ষণে নারকেল গাছের চিরুনীর মতন পাতা থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে বারান্দার গ্রিলে। গ্রিলের গা ঘেঁষে ঘেঁষে ফোঁটাগুলো আরও গোল হয়ে জমা হচ্ছে আর পড়বো পড়বো করছে। এক ফোঁটা, দু'ফোঁটা, তিন ফোঁটা করে জল ঝরছে। ঝরে পড়া বিন্দু বিন্দু জলেরা আমার হাতের তালুতে এসে জমছে। জলের বিন্দুগুলো ক্রমশ বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হয়ে হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইছে। অথচ আমি আমার হাতটা আরও শক্ত সুন্দর মুষ্টি করে রেখেছি।
তবুও আঙুলের ফাঁক গলে অচিরেই এই বয়ে চলা জলেরা এক ফোঁটা, দু'ফোঁটা, তিন ফোঁটা করে ক্রমশ সবটুকু গড়িয়ে আরও বিশাল জল হয়ে যায়।
এই ফোঁটা ফোঁটা জল, ফোঁটা ফোঁটা সময় সবটাই এত ক্ষণস্থায়ী কেন? নাকি সব কিছুর মাঝে আমি নিজেই এক অবাস্তব প্রতিবিম্ব?
12 মন্তব্যসমূহ
বেশ লাগলো
উত্তরমুছুনProfessional!
উত্তরমুছুনSundor chilo
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনভাল্লাগলো লেখা
উত্তরমুছুনআরো হোক দেখা
লেখনীতে মাগো
তুমি আরো জাগো
প্রথম লাইনেই বাজিমাত। অসাধারণ! অভিনন্দন!
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনপ্রথম বাক্য অসাধারণ লাগল
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনখুব সুন্দর,, ভিজে গিয়েছি চন্দ্রাবতী
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুনঅল্প কথায় গল্প।
উত্তরমুছুনঅমার্জিত মন্তব্য করে কোনো মন্তব্যকারী আইনী জটিলতায় পড়লে তার দায় সম্পাদকের না৷