New

শ্বেতপত্র

প্রবন্ধঃ বেয়াদবির উপাখ্যান / মোকলেছুর রহমান


সব বয়োজ্যেষ্ঠদের পায়ের ধূলো মাথায় মাখতে নেই; তাদের পায়ের ধূলো যথাস্থানে রাখতে হয়। আর ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা জানতে পাই- আমাদের আদব-কায়দায়, সৌজন্যে এমনকি শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও রয়েছে শাহ-সামন্ত যুগের নিয়ম-নীতি, রীতি-রেওয়াজের ঐতিহ্য ও আদল। সময়ের পরিক্রমায় জমিদারি উচ্ছেদ, প্রজাস্বত্ব অাংশিক প্রতিষ্ঠা, গ্রামের লোকের নগরে-বন্দরে যাতায়াত বৃদ্ধি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সৈনিক হিসেবে দেশ-বিদেশ দেখা, কলকারখানার শ্রমিকরূপে গ্রামের লোকের শহরে বাস, কেরানী তৈরির শিক্ষার প্রসার-প্রভাব, গ্রামীন সরল লোককেও আর সরল রাখছে না। মানুষের শৈল্পিক চিন্তা-ভাবনার চর্চা ও সুকোমলবৃত্তির বিকাশও থেমে নেই। এতে প্রতিক্রিয়াশীল বা রক্ষণশীল প্রাচীনপন্থি আর গ্রহণশীল প্রগতিপন্থির মধ্যে জীবনের সর্বক্ষেত্রেই রুচির, যুক্তির, বুদ্ধির ও শ্রেয়বোধের একটা অস্বস্থিকর বা অসহ্য ব্যবহারিক ও মানসিক দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠল। যারা নতুন জীবন, নতুন সমাজ ও নতুন এক বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখছে, প্রগতির পথে ও পক্ষে চলছে; তাদেরকেই রক্ষণশীল-প্রতিক্রিয়াশীলরা বেয়াদব আখ্যা দিয়ে রড়ই স্বস্তি পায়।

সাম্প্রতিক সময়েও বেয়াদবি স্বাধিকার চেতনা ও বিপ্লবমুখীতার লক্ষণ। শিল্প বিপ্লবের ফলে শ্রমশিল্পের যে বিকাশ ঘটে, তাতে আঠার শতকের শেষ দিকে ও ঊনিশ শতকের প্রথমার্ধেই ইউরোপে বেয়াদবি শুরু। আর ঔপনিবেশিক শাসনে শ্রমশিল্পের বিকাশ ঘটেনি বলেই আমাদের দেশে বুর্জোয়া পুঁজির বিকাশে বিলম্ব হচ্ছে; তেমনি বেয়াদবির প্রকাশও ঘটছে বিলম্বে। লোকনিন্দার পরোয়া না করে আচরণ যেমন অবাঞ্চিত তথা বেয়াদবি; তেমনি সাহিত্য-শিল্প-দর্শন ও ইতিহাসে, পুরনো শাস্ত্রে শ্রদ্ধার স্বল্পতা, আর্থিক জীবনে সুবিচার, পুরনো বিশ্বাস-সংস্কারে নিন্দা, পুরনো মূল্যবোধে উপহাস, নিয়ম-নীতি পালনে শৈথিল্য, অন্যায়ের প্রতিবাদ, বিজ্ঞাননির্ভরতা, যুক্তিবাদিতা, আর্ন্তজাতিকতা, স্বাধিকারচেতনা, সমাজতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি মৌলবাদি সামন্ত-বুর্জোয়াদের কাছে বেয়াদবি ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু তাদের মতো না বলে যদি বেয়াদবির অপর নাম নতুন হয়, চিন্তায়-কর্মে ও আচরণে গোড়ায় নতুনের ধারক থাকে নগন্য কয়জন, মধ্যে তার বাহক হয় অসংখ্য, পরিনামে সর্বজনীন হয়ে স্থিতি পায় নতুন। স্বাধিকারে স্ব-প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গরজেই গণমানুষকে বেয়াদব হতে হবে।

আমাদের বেয়াদবি প্রগতির লক্ষণ, আত্মচেতনার অভিব্যক্তি, বিদ্রোহের বীজ, বিপ্লবের সংকেত, সমাজ-সভ্যতা-সংস্কৃতি নির্মাণে চলবেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

22 মন্তব্যসমূহ

  1. সুন্দর লেখনী, শব্দের বজ্র আঁটুনি।

    উত্তরমুছুন
  2. সুন্দর লেখা বেশ পরিপাটি এবং সুবিন্যস্ত লেখা

    উত্তরমুছুন
  3. তুমি এত বেয়াদব ছোটভাই?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. বেয়াদবির আরও অনেক কিছুই আছে, যারা নতুনকে মেনে নিতে পারে না তাদের জন্য।

      মুছুন
  4. তোমাকে নীয়ে আর পারা গেল না মোখলেচুর
    কবিতা ছেড়ে এখন এসব বেয়াদবী লেখা শুরু করেছ

    উত্তরমুছুন
  5. ঠিকঐ কইছেন ভাই৷ ঘাড়ত্যারা না হইলে সমাজ পাল্টাবারনয়

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ভদ্রতা মানেই দূর্বলতা নয়, আর সব বেয়াদবি অভদ্রতা নয়।

      মুছুন
  6. ভালই লিখছিস দোস্ত ,অনেক পরিপাটি এবং সুবিন্যস্ত লেখা ।
    GOOD

    উত্তরমুছুন
  7. অসাধারণ লেখনী। সার্বজনীন কল্যান চিন্তাকামী অর্থাৎ নিঃস্বার্থভাবে সমাজের তথা রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য যারা নিরলসভাবে কাজ করে আমার মতে তাদেরকে প্রতিক্রিয়াশীল এর পরিবর্তে বেয়াদব হিসেবে আখ্যায়িত করলেই বরং যথার্থ হবে।

    উত্তরমুছুন
  8. সমাজের মায়েরে বাপ

    উত্তরমুছুন
  9. সমাজের পুটকী সই

    উত্তরমুছুন
  10. দুইয়ে দুইয়ে চার
    কবির পুটকি মার

    মার একটা গুতা
    বেয়াদবি ছুটা

    এই লেখাটি ভাল
    অন্যগুলো কালো
    ছিল না মোটেই ভাল

    তোমায় দিয়ে কাব্য
    হবে না কো সভ্য

    তুমি কাব্য ছাড়
    গরুর লাঙ্গোল ধর

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. কবি ইদ্রিস আলী আপনি তো ভালই কাব্য করেন সব কিছুই। আপনার এতো প্রতিভা চেপে রাখলে হবে? প্রকাশিত হন।

      মুছুন
  11. যে বেয়াদপ, সে তো তার পক্্ষে কথা বলবে। ভাল লাগল না ্এ্ই রচনা। ্ইহা ্উৎকট ভাবনামাত্র।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. যেকোন লেখা কার ভাল লাগে, আবার কার ভাল লাগে না। প্রত্যেক পাঠকের মন বা পঠন-পাঠন স্তর আলাদা-আলাদা ধাচের। আলাদা দর্শনে বা চিন্তায়, আলাদা উচ্চতায়। সুতরাং আপনার ভাল না লাগতেই পারে। লেখা ভাল লাগা না লাগা পাঠকের নিজস্ব এক্তিয়ার, লেখকের কাজ তার লেখা ঠিকঠাক লিখে যাওয়া।

      মুছুন
    2. আপুনি ঠিকটাক লেখি যাচ্ছেন? 😂😂

      মুছুন
  12. এইতও জাতিভাইয়ের মতো কতা। আসেন ভাই বুকে আসেন।

    উত্তরমুছুন

অমার্জিত মন্তব্য কাম্য নয়