New

শ্বেতপত্র

অপরাজিতা / বন্দনা বসু

আলো খুব গরীব ঘরের মেয়ে । আলোর বাবা রিক্সা চালায় আর মা লোকের বাড়ি কাজ করে। আলোর মার খুব ইচ্ছে আলোকে লেখা পড়া শেখাবে ।আলোর বাবাকে মেয়ের লেখা পড়া শেখানোর কথা বললে,আলোর বাবা বললো ঠিক আছে স্কুলে ভর্তি করে দাও। দুই জনে মিলে যা রোজগার করবো, কষ্ট করে মেয়েকে তাই দিয়ে আমরা পড়াবো । পাড়ার স্কুলে আলোকে কে ভর্তি করে দিলো । আলো মন দিয়ে পড়াশোনা করে । অনেক কষ্ট করে আলো মাধ্যমিক পাশ করালো । আলোরা একটা বস্তিতে থাকে, সেই বস্তির লোকেরা আলোর মা কে বলতে লাগলো, আর পড়িয়ে কাজ নেই । গরীবের ঘরে এতো লেখা পড়া করে কি হবে? তুই ওকে কোনো এক বাড়ি তে কাজে লাগিয়ে দে। তোর সংসারে দুটো টাকা আসবে । আলোর মা ওদের কথায় কান দেয় না । মনে মনে ভাবে শত কষ্ট হলেও আমরা আলোকে লেখাপড়া শেখাবো। অনেক কষ্টে আলো বি এ পাশ করলো। কিন্তু এরপর আলোর মা আর পড়াতে পারলো না । আলো চাকরির পরীক্ষা দেওয়া শুরু করলো কিন্তু কোথাও চাকরি পায় না।এদিকে বস্তির সবাই আলোকে দেখলেই নানান কথা শোনায় । একদিন আলো মা কে বললো ,মা কোথাও তো চাকরি পাচ্ছি না। আমি লোকের বাড়ির পরিচারিকার কাজ নিই । তুমি ভালো দেখে একটা বাড়ি ঠিক করে দাও । আলোর মা কিছুতেই রাজি হয় না। মেয়ে এতো লেখাপড়া শিখে কি না লোকের বাড়ি কাজ করবে? মেয়ে কে বললো আমি আর তোর বাবা আছি তো কষ্ট হলেও চালিয়ে নেবো। তুই আর একটু চেষ্টা কর মা। আলো বললো ঠিক আছে । অনেক চেষ্টা করার পরও কোথাও কিছুই হলো না। এরপর আলো একদিন মা কে বললো , মা আমাকে কিছু টাকা দিতে পারো । মা জিজ্ঞাসা করলো কি করবি টাকা দিয়ে? আলো বললো আমি গাড়ি চালানো শিখবো। আলোর মা তো অবাক মেয়ে কি বলে? আলো তখন মা কে বুঝিয়ে বলে গাড়ি চালানো শিখে সে গাড়ি চালাবো । আজকাল এই লেখাপড়ায় চাকরি পাওয়া যায় না । আর আমরা গরীব মানুষ আমাদের জন্য কে আর কি করবে? তাই ভাবলাম এখন মেয়েরা তো গাড়ি চালায়। আমিও শিখে গাড়ি চালাবো কিছু রোজগার হবে। তোমাদের পাশে দাঁড়াতে পারবো। দেবে মা কিছু টাকা । আলোর মা বলে আশেপাশের লোকজন কি বলবে তুই যদি গাড়ি চালাস? আলো বলে কে কি বললো সেটা বড় কথা না? আমি যদি সৎ পথে থেকে কাজ করি সেটাই বড় কথা ।আলোর মা বললো ঠিক আছে তাই কর। আলো গাড়ি চালানো শিখলো এবং লাইসেন্স পেলো। কিন্তু এখানে কাজ পাওয়া আরও কঠিন হলো। একে মেয়ে তার উপর পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, তাই যেখানেই ইন্টারভিউ দিতে যায়, সব জায়গায় একই কথা জিজ্ঞাসা করে পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কি না? আলো না বলাতে তার আর কাজ হয় না। আলো ভাবে কেউ যদি কাজেই না নেয় তবে অভিজ্ঞতা হবে কি করে? একদিন আলো সাহস করে বলেই দিলো আমাকে কেউ কাজের সুযোগ দিলে তবেই তো আমার অভিজ্ঞতা হবে। যেখানে কাজের জন্য গিয়েছিলো সেই ভদ্র লোক আলোকে ড্রাইভারের কাজ টা দিলেন। আলো খুব ভালো ভাবে গাড়ি চালালো। মালিক খুব খুশি। মাসের শেষে যা মাইনে পায় মার হাতে তুলে দেয় । মা আলোর টাকা গুলো খুব দরকার না পরলে খরচ করে না , জমিয়ে রাখে।এদিকে তো বস্তির লোকেরা আলোকে দেখলে নানা কথা বলে। এতো রাত করে বাড়ি ফেরে, গাড়ি নিয়ে কার সাথে কোথায় যায় । আলোর এই সব কথা শুনতে আর ভালো লাগে না । কিন্তু কিছু করার নেই এখনি তো আর কোথাও যেতে পারবে না । তাই সব কথাই হজম করে। এদিকে আলো গাড়ি চালিয়ে ভালোই রোজগার করছে । বেশ কিছু টাকা জমিয়েছে। একদিন আলো মা কে বললো, মা আমি ভাবছি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একটা পুরোনো গাড়ি কিনবো। আলোর মা বললো সে তো অনেক টাকা । তুই যদি শোধ দিতে না পারিস তখন কি হবে ? আলো বললো পারবো মা , তোমরা যদি আমার সাথে থাকো । আলোর মা বললো আমরা সব সময় আছি তোর সাথে । তাহলে তো আর কোনো চিন্তা নেই । আমি তাহলে ব্যাংকে লোনের জন্য একটা দরখাস্ত করে দিই যদি লোন পেয়ে যাই তবে গাড়ি কিনেই নেবো। আলো একটা পুরোনো গাড়ি কিনলো। এবার থেকে আলো নিজের গাড়ি নিয়ে নিজেই ভাড়া খাটবে । আলো একটি কোম্পানিতে নাম এন্ট্রি করলো। গাড়ির নাম্বার দিয়ে লোকেরা গাড়ি বুক করতে লাগলো । আলো গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় । কিন্তু যারা গাড়ি বুক করে আলোকে দেখে তারা আবার গাড়ি ক্যানসেল করে দেয়। কারণ আলো একজন মেয়ে তার গাড়িতে উঠলে যদি এক্সিডেন্ট  হয় এই ভয়ে । আলো পরলো মহাবিপদে , কেউ তার গাড়িতে উঠতেই চাইছে না । মানুষ জনকে বুঝিয়েও ও পারছে না ।এই ভাবে কদিন চলার পর দুই এক জন করে আলোর গাড়িতে উঠতে আরম্ভ করলো । আলোও গন্তব্যে ঠিক মতো পৌঁছে দিতে লাগলো। আবার কোনো কোনো কাস্টমার আলোকে মেয়ে পেয়ে নানান রকম সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতো। আলো সমস্ত বাঁধা কে অতিক্রম করে একদিন মাথা তুলে দাঁড়ালো। কিছুদিনের মধ্যে আলোরা ওই বস্তি ছেড়ে একটা ছোটো বাড়ি করে অন্য জায়গায় চলে গেলো। এরপর একে একে আলোর উন্নতি হতে লাগলো । আস্তে আস্তে আলো কয়েকটা গাড়ি কিনলো । সেই গাড়ি গুলো চালাতে দিলো ওর মতো গরীব ঘরের মেয়েদের কে । যাদের কিছু করার ইচ্ছে আছে । আলো গরীব মেয়েদের পাশে এসে দাঁড়লো । কারণ ও জানে একটি গরীব মেয়েকে কতো বাঁধা অতিক্রম করে তবে এই জায়গায় আসতে হয় । তাই আলো ঠিক করেছে গরীব মেয়েদের প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেবে । আলোর মা বাবাও আজ খুব খুশি কারণ মেয়ে কতো মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে আছে । এটা কম বড় পাওনা। এতো লড়াই করে আমাদের মেয়ে আজ জয়ী হয়েছে । তাই ইচ্ছা আর সততা থাকলে সমস্ত প্রতিকুলতার মধ্যে থেকেও কিছু একটা করা যায়। এটাই আলো প্রমাণ করে দিলো।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

অমার্জিত মন্তব্য কাম্য নয়