New

শ্বেতপত্র

এক টাকা দিলে দুই টাকা পাবে / শিখা সরকার



নন্দুর তিন দিন ধরে কিছু খাওয়া হয় নি। কোন কাজকর্ম নেই। ক্ষিদের জ্বালা আর সহ্য করতে পারছে না। সারা ঘর খুঁজে খুঁজে দুটো টাকা পাওয়া গেল। নন্দু ভাবলো এই দুটো টাকায় কিছু কিনে খেয়ে কাজ খুঁজতে বেরোবে। দুগ্গা দুগ্গা করে ঘর থেকে বেরোতেই..... এক ভিখারি, "এক টাকা দিলে দুই টাকা পাবে".....".এক টাকা দিলে দুই টাকা পাবে"। কথাটা শুনেই নন্দুর মনটা কেমন নরম হয়ে গেল। এক টাকা দিলে দুই টাকা পাব? তাহলে দিই না কেন..... দুই টাকা দিলে যদি চার টাকা হয় তাহলে খাওয়াটা ভালো হবে। এই ভেবে নন্দু টাকাটা ভিখারীকে দিয়েই দিলো।

এবার নন্দু নিজের গন্তব্যে হাঁটতে শুরু করলো। হাঁটছে আর ভাবছে... কই? কোন টাকাই তো হচ্ছে না! কখন হবে? ক্ষিদের জ্বালা আর সহ্য হয় না তো ? তবে কি ভিখারি মিথ্যা কথা বলল ? যাঃ..দুটো টাকা ছিলো তাও গেলো? নন্দু হাঁটতে হাঁটতে বহুদূর চলে গেছে। কোন কাজ মিলছে না। যেখানে যাচ্ছে বলছে কাজ হবে না।

সেই কোন সাত সকালে বেরিয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে আর কাজ খুঁজতে খুঁজতে বেলা এখন পশ্চিমে হেলান দিয়েছে।

নন্দু এবার কাজ খোঁজা ছেড়ে দিয়ে মনের দুঃখে কষ্টে নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে শুরু করেছে, গন্তব্যহীন পথ। হাঁটছে তো হাঁটছে..... সারাদিন না খেয়ে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে নন্দুর আমাশয় বেঁধে গেছে। অতএব ঘন ঘন......?? 

নন্দু আর পারছে না। বেলা গড়িয়ে পাটে বসেছে। সোনালী লাল আলো যেন আগুনের ঝলকানি। নদীতে তখন ভাটা নেমে গেছে। নদীতে ভাটা নামলে নদীর চর সংলগ্ন পাড়ে কিছু ঝাকালো গাছ জেগে ওঠে। নন্দু ঐ ঝাকালো গাছের মাথা ধরে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে বসেছে। এমন সময় ওই ঝাকালো গাছ উপড়ে নন্দু ডিগবাজি খেয়ে সোজা নদীতে পড়ে গেছে। নন্দু একটু ভয় পেয়ে গেছে। যাই হোক নদীতে স্নান সেরে উঠে আসছে। উঠতে উঠতে নন্দুর চোখ গেছে যেখান থেকে ঝাকালো গাছটা উপড়ে পড়েছে। দেখে শেষ বিকেলের রোদে কি যেন চিকচিক করছে। নন্দু এগিয়ে গেল, কি যেন একটা সোনার পাতের মতো। নন্দু এবার হাত দিয়ে মাটি সরাতে লাগলো। মাটি সরিয়ে দেখল, সোনার টাকায় ভরা সোনার কলসি। নন্দুর আনন্দ আর ধরে না। তার কষ্ট সার্থক হয়েছে। ওই কলসি সে অতি সতর্কতার সাথে বাড়ি নিয়ে এসেছে।

তারপর নন্দু হঠাৎ ধনী হয়ে উঠলো। বিশাল বাড়ি-গাড়ি, তখন সবার নজরে এসে গেছে। সবাই কানা ঘুসো করছে, কি করে বড়লোক হলো!! একদিন পাশের বাড়ির পচা দা‌ এসে বলছে, এই নন্দু তোর রহস্যটা কি বলতো? তুই রাতারাতি কি করে বড়লোক হয়ে গেছিস? নন্দু মনে মনে হাসছে। তবে শোন পচা দা...। 

নন্দু বললো, হু....হু.... পচা দা, এত সহজ নাকি? তিন দিন না খেয়ে থাকতে হবে। ঘর কুড়িয়ে দুটো টাকা পেয়ে কাজে বেরোতে হবে। ভিখারি এসে বলবে এক টাকা দিলে দুই টাকা পাবে। টাকাটা দিয়ে দেবে কিন্তু কিছুই পাবে না। তারপর সারাদিন না খেয়ে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে আমাশা বাঁধাতে হবে। তারপর নদীর চরে ঘাস ধরে অতি প্রয়োজনীয় কাজ সারতে বসতে হবে। আবার সেটা উপড়ে ডিগবাজি খেয়ে নদীতে পড়ে যেতে হবে। উঠে আসার সময় দেখবে ওইখানে কি যেন চিকচিক করছে। তারপর মাটি সরিয়ে দেখবে সোনার কলসী। ঐটা তুলে বাড়ি আনলেই বড়লোক হয়ে যাবে। ঠিক আছে নন্দু। আমি কাল সকালে তাই করবো। তবে ভিখারী টা পাবো তো?

২৭.০৪.২০২৩

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

8 মন্তব্যসমূহ

  1. অনাবিল গল্প হয়েছে। কবিকে ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  2. কারো প্রতি অন্যায় করলে ,নির্দিষ্ট ঐ ব্যক্তি ক্ষমা করলেও প্রকৃতি কখনো ক্ষমা করে না।

    প্রতিশোধ সে নেবেই। হয়তো সময় লাগবে। কিন্তু সে কখনো ছেড়ে দেবে না।

    একে বলে নিয়তি। 💜

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. FARHANA AHMED
      আপনি আপনার মন্তব্যে যা বোঝাতে চেয়েছেন তার সাথে আংশিক সহমত হলাম।
      আপনাকে ধন্যবাদ

      মুছুন
    2. মন্তব্যটি আপনার উদ্দেশ্যে নয় গল্পটি পাঠ করে মন্তব্য করেছি

      মুছুন
  3. আম্মুকে ডেকে বললাম পানি খাবো।

    আম্মু: নিজে উঠে খাও। না হলে বউ নিয়ে এস, সে তোমাকে পানি খাওবে।

    আমি:😶😶

    উত্তরমুছুন
  4. মকলুকে নিয়ে আমি 1টি গল্প রচনা করেছি ৷ অনুমতি দিলে শ্বে তপএে প্রকাশের জন্য দিতে চাই

    উত্তরমুছুন

অমার্জিত মন্তব্য কাম্য নয়