New

শ্বেতপত্র

প্রেরক: অন্তর চন্দ্র


১| বন্ধুকে লেখা চিঠি:

                               ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রিয় বন্ধু,                         চিলমারী, কুড়িগ্রাম

যদিও আমি চির বন্ধুত্বকে বিশ্বাস করি না। তবুও বন্ধুর কলেবরে এক টুকরো ছেঁড়া পাতা দিতে ভুলি না। তোমার আর আমার মধ্যে যে, ব‌ইয়ের আদান-প্রদান হতো, তা ছিল তোমার ব‌ইয়ের প্রতি ভালোবাসা। মনে পড়ে, মেসোপটেমিয়ার ইতিহাস গিলগামেশ নিয়ে তোমার আর আমার বাড়ির মাঝামাঝি পয়েন্টে কিংবা ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে আলোচনা করতাম। তোমাকে ক্ষেপিয়ে তুলতাম গল্পের পরিধি বৃদ্ধির জন্য, তুমি হালকা রাগ করে গোপনে চেপে রাখতে। আজ আবার ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে যাওয়ার কথা হয়েছে তোমার সাথে, একগাদা গল্পের ঝুড়ি নিয়ে যাবে। আমি ব্রহ্মপুত্রের খুনসুটি কবিতায় ব্যক্ত করব। আসলে, মানুষ কি পায় জীবনের কাছে হেরে গিয়ে? জীবন কি থেমে থাকে? আজকে ঘুরছি এদিক-সেদিক কিন্তু কাল হয়তো পৃথিবীর হরিৎ দ্বীপপুঞ্জ ছেঁড়ে চলে যাব কেউ কেউ, অথচ আমাদের ব্যর্থতাগুলো আবিষ্কার করার সময় থাকে না। তুমি তো বলো, আমার কথা তোমার কাছে খুব কঠিন মনে হয়, বুঝতে পার না। হ্যাঁ, আমার কথা কেউ বুঝে না। কোথায় যেন একটা রহস্য ঢুকে থাকে, এই রহস্যের যিনি স্রষ্টা তুমি তো তাকেই মুহুর্মুহু ডাক। আর হ্যাঁ, আজকে যে নামে তোমাকে লিখছি তাঁর মাঝেও একটা রহস্য আছে, রহস্যের মধ্যে সুখ -দুঃখ আছে। সেটা জেনে নিও সাক্ষাৎতে।
ইউভাল নোয়া হারারি'র ব‌ই পড়তে গিয়ে পেলাম, HOMO SAPIENS হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বিশৃঙ্খলা প্রবণ প্রাণী। তাই মানুষের প্রতি রাগ করো না কখনো এটা মানুষের স্বভাব। মনকে মনের বন্দিনী করে আনন্দে ছুটে বেড়াও। তুমি যে, নিধিধ্যানে বসে যার কথা ভাবো সে যেন “তোত্রবৈত্রিক” জীবনের ইতি টেনে, তোমাকে নতুনের পথে নিয়ে যান। আর সেই আলোর রেখা দেখে আমরাও যেন সুখে হাসতে পারি।
তোমার পরীক্ষা শেষে জর্জ অরওয়েল এর অ্যানিমেল ফার্ম ব‌ইটি নিয়ে গিয়ে পড়বে, তারপর পাঠ প্রতিক্রিয়া জানাবে।

ভালো থেকো মনে রেখো, সূর্যাস্ত হলেই রাত্রি হয় না, সন্ধ্যাকে বন্ধ্যা করতে শিখো, তোমার সামনে তোমার‌ই প্রতিবিম্ব।
                            
                        ইতি তোমার বন্ধু
                               বিসর্গ

২। চিঠিকাব্য নিজের প্রতি নিক্ষেপ:

একটি খোলা চিঠি।
◼️

প্রিয় হৃদিতা,

আকাশের দিকে তাকানোর অভ্যাস অনেকদিন হলো, এখন এটা বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বিগত দিনগুলোতে যখন মাধবীর সারা মাঠ জুড়ে চষে বেড়াতাম গোধূলির পূর্বাভাসে। কিছু দুঃখ ভাসিয়ে দিতাম ব্রহ্মপুত্র আর বুড়িতিস্তায়। আর রাতের বেলা বৈঠকী গানের আসরে রাত জেগে প্রহরগুনি, মাঝে মাঝে মনে হয় এর চেয়ে সুখ কোথায় পাব? গানের প্রতিটি লাইনে জীবন এবং দর্শনের প্রগাঢ় ব্যঞ্জনা। হঠাৎ করেই, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে যে, আগুন অহরহ জ্বলছে আমার দুঃখের বেদিতে, মনে হচ্ছিল, পৃথিবীর হরিৎ মদের চাদরে ঢেকে নিই, অব্যক্ত সব কথা “আবাঙমানসগোচরম্” তুমি দেখ হৃদিতা তার হয়তো শেষ হবে কোনদিন কিন্তু গুরু বিরহ সহ্য হয় না। প্রতিদিন আকাশের তারা ছুটাছুটি দেখে আনন্দিত হতাম, উল্কাপাত দেখে চমকে উঠতাম। আমিও যে একদিন ছুটে যাব প্রহেলী রাতের তারা দেখে, এখন বাতাসেও শ্বাস নিতে ভয়, চারদিকে ভারি হয়ে আসছে উত্তপ্ত মগজ। আমার বড্ড ভয় করে আগুন নিভে গেলে মানুষ বাঁচে কেমনে? এখন আমি রঞ্জনা গাছের বীজ কুড়াই পুঁতে রাখি মাটির পকেটে, যদি ভালোবাসা জন্মায়! হৃদিতা, যা চেয়েছি তা পেয়েছি, সেদিন তো কলকাতার একদল শিল্পী আমার লেখা গানটা গাইল, কত কবিতা কেঁদে কেঁদে কাগজে ঠাঁই নিল কিন্তু আমি কি পেলাম বলো, শুধুই হতাশা আর হতাশা।

দুঃখ পেলে বাতাসের সাথে মিতালী করতাম, রেডিওতে মেতে উঠতাম কিন্তু এখন আর কিছুই ভালো লাগে না। মেঘদল আর বিদ্যৎ চমকায় মনের গহীনে। দুঃখকে মানিয়ে নিতে শিখেছি, মাঝে মাঝে মনে হয়, সুখ-দুঃখ বলতে কিছুই নেই। বুকে একখণ্ড পাথর চাপা ‌। বন্ধুত্বকে আমি কখনো বরণ করিনি। তবু কিছু ভালোবাসা জমা আছে বুকের সকেটে। এখন আমি নিতান্তই নিজেকে মানুষরূপে আবিষ্কার করার চেষ্টা করছি।

হৃদিতা এখন তুমি সৃজিতা হয়ে সৃষ্টি করো, আমি তোমার দুর্বিপাকে বড় হ‌ই। তুমি তো নারী নও, দেবী।

🌿🌿🌿

ইতি তোমার করুণাপ্রার্থী
              বিসর্গ





______________

অন্তর চন্দ্র
চিলমারী, কুড়িগ্রাম







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. বাংলা ব্যাকারন বইয়ে যেসব চিঠি থাকতো ক্লাস ফাইবে সেমন চিঠি

    উত্তরমুছুন
  2. আহা! কী ভাষা! কী ঝংকারসমৃদ্ধ বাক্যগঠন। মুগ্ধ হয়ে গেলাম ছোটভাই। তুমি আমাদের আগামী দিনের কাণ্ডারী, ভাণ্ডারী। তোমার হাতেই বাংলা ভাষার ভবিষ্যত ফকফকা হবে। (যদি আমার হাত খালি হয়)। চিন্তা কোরো না।

    উত্তরমুছুন

অমার্জিত মন্তব্য কাম্য নয়